রহিমা বেগম অপহরণকাণ্ড ষড়যন্ত্রমুলক ও সাজানো নাটক বলে মনে করছেন খুলনার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। অপহরণ মামলার অভিযুক্তদের স্বজনরা বলছেন মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের ফাঁসানোর চক্রান্ত করা হয়েছে। প্রতিবেশীরা ধিক্কার দিচ্ছেন এই গর্হিত কাজের জন্য। শুধু তাই নয়, এলাকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। অবিলম্বে মরিয়ম মান্নানকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন খুলনাবাসী।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে রহিমা অপহরণ মামলার অভিযুক্ত আসামীদের স্বজনরা।
সম্মেলনে দাবি করা হয়, রহিমাকাণ্ডে কথিত অপহরণের নাটক সাজিয়ে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় আসামিরা এখনও জেল খাটছেন। বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করেছে এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড রহিমার কন্যা মরিয়ম মান্নান। দেশবাসীর সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেছে। কিন্তু ঘটনার ২৯ দিন পর ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের জনৈক কুদ্দুসের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার পর দেশবাসীর কাছে এটি স্পষ্ট হয় যে, রহিমা বেগম অপহরণ হয়নি। এপি ছিলো ষড়যন্ত্রমূলক একটি সাজানো নাটক।
সাংবাদিক সম্মেলনে রহিমা অপহরণ মামলায় আসামিদের স্বজনদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে মরিয়ম মান্নান, রহিমা বেগম, অপহরণ মামলার বাদী মরিয়মের বোন আদুরী, ভাই মিরাজসহ প্রভাবশালী কুশীলবদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেয়া হোক। অভিযোগ করা হয়, এখনও প্রভাব খাটিয়ে ষড়যন্ত্র করছে মরিয়ম পরিবার। একই সাথে রহিমা অপহরণ মামলায় জেলে থাকা প্রতিবেশী মো. মহিউদ্দীন. গোলাম বিকরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মদ জুয়েল ও হেলাল শরীফকে দ্রুত মুক্তি দেয়া হোক। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মালিহা মহিউদ্দীন মাহি। উপস্থিত ছিলেন অপহরণ মামলায় জেলে থাকা পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলছেন, রহিমাকাণ্ডে সম্পূর্ণটাই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমুলক নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে একটি পক্ষকে ফাঁসানোর সকল চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করতে গুম অপহরণের কথা বলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা হয়েছে। অপহরণের পর মরিয়ম মান্নান গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির আর হৃদয় বিদারক কান্না দেশের মানুষের সহানুভূতি কুড়ালেও রহিমা উদ্ধারের পর প্রকৃত ঘটনা সামনে আসায় মরিয়ম মান্নানকে নাটকবাজ আখ্যায়িত করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি তোলা হয়েছে।
রহিমাকাণ্ডে বলা হচ্ছে, এই ঘটনার পুরোটাই ছিলো পরিকল্পিতভাবে সাজানো। প্রশ্ন উঠেছে, ২৯ আগস্ট রাতে রহিমাকে অপহরণের সময় কোন চিৎকার চেঁচামেচি শোনা যায়নি কেন। রহিমার ব্যবহার্য জিনিস ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে বলা হলেও তার কিছুটা ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া পচাগলা লাশের পাশে কিভাবে গেল। উদ্ধারের আগে দিব্যি দৈয়দপুরে কুদ্দুসের বাড়িতে রীতিমত গল্পরত অবস্থায় থাকলেও পুলিশ দেখা মাত্র কেন চুপ হলে গেলেন রহিমা। কেন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত ঘটনার কোন তথ্য না দিয়ে মুখে কুলুপ আঁটলেন রহিমা। কেন ফুলপুরে ৩০ বছরের এক নারীর পচাগলা লাশ দেখে ৫২ বছরের মা রহিমাকে বলে দাবি করলে মরিয়ম বেগম। কেন ফরিদপুরে আইডি কার্ড করতে চেয়েছিলেন রহিমা বেগম। পিআইবির জেরায়ও কেন চুপ ছিলেন রহিমা। আবার মরিয়ম মান্নান আসার পর কেন পুলিশকে জানালেন তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এলাকার মানুষ বলছেন আসলে নাটক ধরা পড়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রহিমা পরিবারের পক্ষ থেকে আগেই একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। ওই মামলার আসামিরাও ছিলেন সম্প্রতি রহিমা অপহরণ মামলার আসামির তালিকায়। আগের মামলায় জামিনে ছিলেন তারা। তাই পরবর্তীতে আরও একটি মামলা করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়।
রহিমা অপহরণ মামলার এক আসামি হেলাল শরিফ। তিনি বর্তমানে কারাগারে। তার স্ত্রী মনিরা আক্তার জানান, মরিয়ম মান্নানের সৎ ভাইদের কাছ থেকে আমরা জমি কিনেছি। তাই আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী আয়েশা জানান, বিনা দোষে আমার স্বামীকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
কারাগারে থাকা মহিউদ্দীনের বোন মালিহা মহিউদ্দীন মাহি জানান, আমাদের নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষ এটা বুঝতে পেরেছেন। আমরা মরিয়ম মান্নানসহ এর পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন আমরা খুলনার মানুষকে সাথে নিয়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো, আন্দোলন গড়ে তুলবো।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ আব্দুর রাজ্জাক জানান, এলাকার মানুষ মরিয়ম মান্নানের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে। এই ঘটনায় তদন্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। খুব শীঘ্রই এলাকার মানুষ রহিমা অপহরণ কাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড মরিয়ম মান্নানসহ অন্যান্যদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি এবং মিথ্যা মামলায় অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে গড়ে তুলবে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা বনিকপাড়ার বাসিন্দা রহিমা বেগম নিখোঁজ হন। পরদিন ২৮ আগস্ট তার মেয়ে আদুরী বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। এরইমধ্যে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা এলাকায় উদ্ধার হওয়া একটি পচাগলা লাশ রহিমার বলে দাবি করেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার রাতে বোয়ালমারি থেকে অক্ষত অবস্থায় মরিয়মকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেয়ে রহিমা তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের সাথে ঢাকায় অবস্থান করছে।