বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলা করতে পারলে সামনে সুন্দর সময় আসবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, আইএমএফের বহুল প্রতীক্ষিত ঋণ পাওয়া এবং জুন ক্লোজিংয়ে কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দেওয়ায় বাজার ইতিবাচক হবে। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যা বাজারকে চাঙা করবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা মোকাবিলা করতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।তারা বাজারে সক্রিয় হলে ফ্লোরে আটকে থাকা ২০০ কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে ফিরবে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার খবরে পুঁজিবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লা নাইম বলেন, একটার পর একটা সমস্যা লেগেই থাকে পুঁজিবাজারে। ব্যাংকের বিনিয়োগের হিসাব শেয়ারের ক্রয় মূল্য, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং দেশের রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে ২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে করে বিনিযোগকারীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তবে বহুল প্রতিক্ষিত আইএমএফের ঋণ পাওয়ার খবর এবং জুন ক্লোজিংয়ে সব কোম্পানি ভালো লভ্যাংশের ঘোষণা দেওয়ায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।এদিকে দেশে আগামীতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে যায় তা নিয়ে চিন্তিত বিনিয়োগকারীরা। তারপরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়লে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা ২০০ কোম্পানি লেনদেনে ফিরবে বলেও তিনি মনে করেন।
ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাপারে আইএমএফ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এটা একটি ভালো উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন। এটা বাজার উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখবে বলেও তারা কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মশিউর রহমান।তিনি বলেন, বাজার নিয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে খুব হিসাব করে নিতে হবে। যাতে করে বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। হুটহাট সিদ্ধান্ত বাজারকে ক্ষতি করে। তবে বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা চিন্তা ভাবনা করেই বাজারে বিনিয়োগ করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে (৬-১০ নভেম্বর) সূচকের পতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। সপ্তাহটিতে সব সূচক কমেছে। একই সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধনও কমেছে।বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই ৫ হাজার ৮২২ কোটি ৩০ লাখ ৭৬ হাজার ১৮৩ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ২৩ হাজার ৮৯১ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেনে ৩৪৯ কোটি ৬০ লাখ ৫২ হাজার ২৯৮ টাকা বেড়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৬.৯০ পয়েন্ট বা ০.৮৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৫৩.৭৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৬.০৭ পয়েন্ট বা ১.১৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৭.০২ পয়েন্ট বা ০.৭৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৮৫.০৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২৩৫.৯৭ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৭৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৬৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭৪৮ টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৫৬ কোটি ২ লাখ ২৯ হাজার ৭৮৭ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৬২ লাখ ২৫ হাজার ৯৬১ টাকা কমেছে।অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১১৪ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ০০৪ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১৫৬ কোটি ৩৮ লাখ ১২ হাজার ৯২১ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ৪১ কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৭ টাকা কমেছে। সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮২.০৫ পয়েন্ট বা ০.৯৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৬৩.০৬ পয়েন্টে।