আইওআরএর বর্তমান সভাপতি বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের আয়োজনে আগামী ২২ ও ২৩ নভেম্বর সংগঠনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কমিটি সিএসওর বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। আর ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও এ বৈঠকে যোগ দেবে আইওআরএর ডায়ালগ অংশীদাররা।ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এক প্রকার বৈশ্বিক চাপে রয়েছে মস্কো। এখন বিশ্বজুড়ে বন্ধু খুঁজে বেড়াচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক যে কোনো অনুষ্ঠানে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে প্রতিনিধি হাজির রাখছে দেশটি। অনুষ্ঠিতব্য ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে গঠিত ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) হতে যাওয়া বৈঠকে অংশ নিতে এবার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইওআরএর ডায়ালগ অংশীদার হিসেবে যোগ দিতে ২৪ নভেম্বর ঢাকা আসার কথা রয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। পরদিনই ঢাকা ছাড়বেন তিনি।
নাম না প্রকাশের শর্তে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ডায়ালগ অংশীদার হিসেবে আইওআরএ বৈঠকে অংশ নিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তিনি। তাদের পক্ষ থেকেও ঢাকায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু না জানালেও মস্কো থেকে সফরের বিষয়টি এ সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, এখনও আমরা মস্কো থেকে সবুজ সংকেত পাইনি। তারা বাংলাদেশের কাছে বিভিন্ন বৈঠকসহ বেশ কিছু বিষয়ের নিশ্চয়তা চেয়েছে। আর তাতে রাজি হয়েছে ঢাকা। এ বৈঠকে যোগ দিলে বাংলাদেশ ছাড়াও আইওআরএর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গেও বৈঠকের সুযোগ থাকবে দেশটির। ওই কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এক প্রকার চাপে পড়েছে রাশিয়া। জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিল আনছে পশ্চিমারা। সব বিলেই সদস্য রাষ্ট্রের বড় অংশ তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক এ চাপ সামলাতে বিভিন্ন দেশে গিয়ে সম্পর্ক ঝালাই করে নিচ্ছে মস্কো। নিজেদের বিচ্ছিন্ন না করে বৈশ্বিক ফোরামে রাশিয়ার পক্ষে ভোটও চাচ্ছে। যদি পক্ষে ভোট না দেওয়া সম্ভব হয়, তবে যাতে ভোট দানে বিরত থাকে- এমন আহ্বানই করছে তারা। ফলে বাংলাদেশের কাছেও একই ধরনের আহ্বান থাকবে তাদের।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে দ্বিপক্ষীয় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুই দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। এবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নতুন করে কোনো চুক্তি হবে না। তবে দুই দেশের মধ্যে অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা নিষ্পন্ন হয়েছে। কিছু চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো নিয়েই মূলত বৈঠকে আলোচনা হবে। তাছাড়া ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে চাইবে মস্কো। ঢাকা ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের।
আইওআরএর প্রস্তুতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, সংগঠনের সভাপতি হিসেবে বৈঠকের চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। আইওআরএর সদস্য রাষ্ট্রসহ সব ডায়ালগ অংশীদার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি ইতোমধ্যে উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অন্যরাও তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন বলে আশা করেন তিনি।
১৯৯৭ সালে গঠিত হওয়া আইওআরএর সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ২৩টি দেশ। আর এর ডায়ালগ অংশীদার হিসেবে রয়েছে ১০টি দেশ। ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর দুই বছরের জন্য সংগঠনের সভাপতি হয় বাংলাদেশ।