মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন

উদ্যোক্তাদের সহায়তায় বন্ড মার্কেটে জোর

প্রতিনিধির / ১৬৬ বার
আপডেট : বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২
উদ্যোক্তাদের সহায়তায় বন্ড মার্কেটে জোর
উদ্যোক্তাদের সহায়তায় বন্ড মার্কেটে জোর

নারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ‘পিংক বন্ড’ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বিএসইসির। আর বড় পরিসরের উদ্যোক্তাদের জন্য চালু করা হবে ‘অরেঞ্জ বন্ড’।

শুধু একটি খাত হিসেবে ব্যাংক থেকে অর্থায়ন হওয়ায় ব্যবসার খরচ বেড়েছে উদ্যোক্তাদের। খরচ কমিয়ে আনতে পারলে তা মুনাফায় যোগ হবে, শিল্পায়নে গতি বাড়বে। এক্ষেত্রে বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ বড় সহায়ক হবে বলে এক সভায় মত দিয়েছেন আলোচকরা।

মঙ্গলবার ‘বন্ড মার্কেট : দ্য আল্টিমেট সলিউশন ফর লং টার্ম ফাইন্যান্সিং’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজন করে দেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

সভার প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই মুদ্রা ও পুঁজিবাজার শক্তিশালী। আমাদের দেশে তা নেই।

বন্ড মার্কেট জনপ্রিয় করার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “বন্ডের প্রচার করে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। কিন্তু এর দায়িত্ব কে নেবে? অথচ পুঁজিবাজারের চেয়ে বন্ড মার্কেট অনেক বেশি নিরাপদ। বন্ডে বিনিয়োগ করলে আসল টাকা খোয়া যাওয়ার কোনো ভয় নেই।”

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস-চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, বর্তমানে দেশের বন্ড মার্কেট সরকারনির্ভর। জাপান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ-আফ্রিকা, চীন, থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামসহ অনেক দেশের চেয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের অনুপাত অনেক নিচে।

তিনি জানান, যেখানে জাপানে এ হার জিডিপির ২৪১ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ১৬৯ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের ১১৫ শতাংশ, প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৪৯ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে ৮ শতাংশ। এই ৮ শতাংশের মধ্যে ৭ দশমিক ৯ শতাংশই সরকারি পর্যায়ের বন্ড। বেসরকারি খাতে বন্ডের অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।

প্রবন্ধে সুপারিশ করা হয়, বন্ড মার্কেট জনপ্রিয় ও অর্থ সংগ্রহের খরচ কমিয়ে আনতে সরকারি পর্যায়ে নেওয়া প্রকল্পগুলো বন্ড আকারে ছাড়ার জন্য। সরকার চাইলে বাজেট ঘাটতিও বন্ড ছেড়ে পূরণ করতে পারে।

পুঁজিবাজারে বন্ডের লেনদেনের সর্বনিম্ন আকার ১ লাখ টাকা। এবং লেনদেন ফি ১ হাজার টাকা জানিয়ে বন্ডের লটের আকার ছোট করার পরামর্শ দেয়া হয় আলোচনা অনুষ্ঠানে।

বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করলে শিল্পে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগে সুবিধার কথা জানান পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তিন মাস পর পর কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে খেলাপি হতে হয়। এতে ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে স্বল্প মেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করছে ব্যাংক। এতে তারল্য সঙ্কট দেখা দেয়।”

এই একটি খাত হিসেবে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করায় ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিকল্প অর্থায়নের অংশ হিসেবে বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করে দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পে বিনিয়োগ করলে ব্যবসায়ীদের খরচও কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেমিনারে জানানো হয়, পুঁজিবাজারে পারপেচুয়াল বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট জনপ্রিয় করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) ৪ বিলিয়ন ডলারের বন্ড ছাড়তে চায়।

এজন্য নারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ‘পিংক বন্ড’ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বিএসইসির। আর বড় পরিসরের উদ্যোক্তাদের জন্য চালু করা হবে ‘অরেঞ্জ বন্ড’।

বন্ডের লেনদেন সহজ করতে এফবিসিসিআইর পরিচালক আমজাদ হোসাইন বলেন, “বেশিরভাগ বন্ডের মাত্র ১০ শতাংশ সাধারণ মানুষের জন্য রাখা হয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশ প্রাইভেট প্লেসমেন্ট, যেটা সাধারণভাবে লেনদেন হয় না। প্রাইভেট প্লেসমেন্টগুলোকে একটি নির্দিষ্ট লকিং পিরিয়ডের পর পাবলিক ট্রেডিং এ আনা যেতে পারলে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে। কোনো ব্যাংক কর্পোরেট বন্ড সাবস্ক্রাইব করতে চাইলে স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল (এসপিভি) শর্ত পূরণ করতে হয়, যেটি অন্য ব্যাংকের বন্ড কেনায় প্রয়োজন হয় না। এই বিধানটি পুনঃবিবেচনা করা যেতে পারে।”

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বন্ড জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন কর্পোরেট বন্ডের পর্যালোচনা মূল্যায়ন করা, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে সংযুক্ত করা, সুনাম রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ডে আগ্রহী করে তোলা, দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নের জন্য ১০ বছরের অধিক মেয়াদী বন্ডে আগ্রহী করা, কর্পোরেট বন্ডে করছাড়সহ নীতি সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “দেশে শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণদানের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান নেই। ব্যাংকগুলোর জন্য স্বল্প মেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দেওয়া কঠিন। ব্যাংকের স্বল্পমেয়াদী ঋণই খেলাপি বাড়ার মূল কারণ। এক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠান অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেলাপি হয়ে যায়।”

আলোচনায় অংশ নেন সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্র কান্তি চৌধুরী, ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও, লংকা বাংলা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ