দেশের প্রবাসী আয়ের সিংহভাগ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ দুটি দেশ থেকেও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে রেমিট্যান্স। জুলাই মাসে সৌদি আরব থেকে প্রবাসীরা দেশে পাঠান ৩৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। আগস্ট মাসে দেশটি থেকে আসে ৩৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসে আসে মাত্র ৩০ কোটি ডলার। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। অদ্ভুতভাবে আগস্ট মাসেও দেশটি থেকে একই পরিমাণের রেমিট্যান্স আসে। গত মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আসার হার সবচেয়ে কম। এ মাসে মাত্র ১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার আসে আরব আমিরাত থেকে।
এ ছাড়া জুলাই এবং আগস্ট মাসে অন্যান্য দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্সের হার কমেছে সেপ্টেম্বর মাসে। ব্রিটেন থেকে গত মাসে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। কুয়েত থেকে আসে ১১ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। মালয়েশিয়া থেকে আসে মাত্র সাত কোটি ৮৩ লাখ ডলার। ইউরোপের অন্যতম বাংলাদেশি অধ্যুষিত দেশ ইতালি থেকে রেমিট্যান্স আসে আট কোটি ৬৫ লাখ ডলার। এ ছাড়া কাতার থেকে আসে ১১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।
উল্লেখ্য, এসব দেশ থেকেই জুলাই-আগস্টের তুলনায় রেমিট্যান্স কম এসেছে সেপ্টেম্বর মাসে।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। আন্তর্জাতিক এ মুদ্রাটির সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে শঙ্কা তৈরি করেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তৃতীয় মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। এক মাসেই দেশটি থেকে প্রবাসী আয় কমেছে ৮ কোটি ডলারেরও বেশি।এদিকে অর্থবছরের তৃতীয় মাসে এসে যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে প্রথম স্থানে ওঠে আসে সৌদি আরব। জুলাই মাসে দেশটি থেকে ৩৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসে। আগস্টে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। কিন্তু গত মাসে ৮ কোটি ডলার কমে প্রবাসী আয় আসে মাত্র ২৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।
ডলার সঙ্কট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার নানা রকমের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় বড় ধাক্কা খেয়েছে দেশ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার, যা সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রবাসীদের এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার কম। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সময়ের আলোকে বলেন, ‘করোনার পর হুন্ডি চালু হয়েছে পুরোপুরি। এ কারণে নিয়মিতভাবে রেমিট্যান্স কমছিল গত বছর থেকেই। চলতি অর্থবছরে ইতিবাচক আভাস দিলেও আবার তা পেছনের দিকে যেতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে হুন্ডিকেই ধরা হচ্ছে।’প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাড়াতে গত বছর থেকে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এরপরও ২০২১-২২ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম রেমিট্যান্স আসে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় রেমিট্যান্স কমেছে বলে ধারণা একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসলে গ্রাহককে আমরা ১১০ টাকা পর্যন্ত দিয়েছি। অন্য ব্যাংক দিয়েছে ১০২-১০৪ টাকা। আমরা বেশি দেওয়ায় আমাদের কাছে রেমিট্যান্সও ভালো আসে। কিন্তু বাফেদা ও এবিবি রেমিট্যান্সের দাম বেঁধে দেওয়ায় কমে যায় প্রবাসী আয়। যেখানে হুন্ডিতে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১৫ টাকা পাওয়া যায়, তাও আবার হোম ডেলিভারি সার্ভিসে; সেখানে কেন ভাড়া দিয়ে ব্যাংকে এসে এত অল্প দামে রেমিট্যান্স নিতে আসবে মানুষ?’
জুলাই ও আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স ছাড়ায় ২০০ কোটি ডলারের ঘর। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে বাফেদা ও এবিবি যৌথভাবে একক দরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই রেমিট্যান্সের হার কমে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র। এ ধারা চলতি মাসেও অব্যাহত আছে বলে জানা যায়।