সময়ের হিসাবে ৮ মাস হলেও মূলত এটি একযুগের জার্নি! দীর্ঘ এই সফর শেষে বুধবার (৫ অক্টোবর) ভোরে বাড়ি (ঢাকা) ফিরেছে টিম ‘কাজল রেখা’।
কাজটি শেষ করার প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে এর জনক গিয়াস উদ্দিন সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ছবিটি শেষ করতে চেয়েছি মূলত ভেতরে জমে থাকা একযুগের ক্লান্তি দূর করার জন্য। গত ৮ মাস সেই ক্লান্তি মুছতে কাজ করেছি টানা। অদ্য ভোরে শুটিং শেষ করে দুর্গাপুর থেকে বাড়ি ফিরেছি ক্লান্ত শরীরে!’
শুটিং শেষ হলেও সিনেমার কাজ বাকি রয়েছে অনেক। এমনটাই মন্তব্য করেন সেলিম। কারণ, সম্পাদনা, সংগীত, কালার গ্রেডিংসহ প্রচুর কাজের পর সিনেমার মূল চেহারা দাঁড়াবে। এর জন্য এ বছরটা সময় চাইছেন নির্মাতা।
বললেন, ‘শুটিং শেষ মানে অর্ধেক কাজ হলো মাত্র। বাকি অর্ধেক হবে সম্পাদনার টেবিলে; সংগীত, ডাবিং, কালারসহ আরও কতো কী!’
‘কাজল রেখা’র শুটিং চলেছে ৮ মাস ধরে। এই সময়ে সেলিম ও তার দল ঘুরেছে দেশের বেশিরভাগ বিশেষ অঞ্চলে। এরমধ্যে রয়েছে সুসং দুর্গাপুর, টাঙ্গুয়ার হাওর, সুন্দরবন, কক্সবাজার, খুলনা প্রভৃতি।
সরকারি অনুদান নিয়ে বাঙাল ফিল্মস-এর ব্যানারে ছবিটি নির্মাণ হচ্ছে। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। তার বিপরীতে আছেন সময়ের সফল নায়ক শরিফুল রাজ। অন্যদিকে ভিলেন হিসেবে কঙ্কন দাসী চরিত্রে পাওয়া যাবে দুই বাংলার প্রিয়মুখ মিথিলাকে।
‘কাজল রেখা’য় আসলে কী এমন আছে যে যেটি নির্মাণের জন্য একযুগ ধরে রীতিমতো যুদ্ধ চালিয়েছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম! ২০০৯ সালে ব্লকবাস্টার ‘মনপুরা’র মুক্তির পরই এই ছবিটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন নির্মাতা। প্রযোজক পাননি, নির্মাণের পরিবেশ পাননি, মনের মতো শিল্পী পাননি− কিন্তু হাল ছাড়েননি। বরং প্রতিনিয়ত ছবিটি নির্মাণ প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন নীরবে। মাঝে জন্ম দিয়েছেন আরও ছবি- ‘স্বপ্নজাল’, ‘পাপ-পুণ্য’, ‘গুণিন’। তবু ‘কাজল রেখা’ বানানোর হাল ছাড়েননি। নিশ্চয়ই এই ছবিতে বড় কোনও রহস্য লুকিয়ে আছে।
বাংলা ট্রিবিউনের এমন প্রশ্নের জবাবে মুখটা চওড়া করে শুধু বললেন, ‘রহস্য তো আছেই। তবে সেটা তুলে রাখলাম দর্শকের জন্য। পর্দায় দেখে তারাই বুঝুক, কেন আমি ছবিটি নিয়ে এত সংগ্রাম করেছি।’
মৈমনসিংহ গীতিকা থেকে এর গল্প তৈরি। কিন্তু কোনও এক বিশেষ কারণে কোনও প্রযোজকই আগ্রহী হননি বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম হিট ছবি দেওয়া এই পরিচালকের ‘কাজল’-এর জন্য। ‘‘মনপুরা’ আমার প্রথম চলচ্চিত্র। সেটি নিয়েও আমি বহু বছর ঘুরেছি। তবে ‘কাজল রেখা’র মতো এতটা নয়’’, ভাষ্য সেলিমের।
অবশেষে ২০২০ সালে ‘কাজল রেখা’র জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান পান সেলিম! বললেন, ‘ছবিটি শুটিংয়ের জন্য ৫০০ বছর আগের সময়ে ফিরে যেতে হয়েছে আমাকে। লোকেশন, আবহ− সব সেই সময়ের জন্য তৈরি করতে হয়েছে। মৈমনসিংহ গীতিকায় কাজল রেখার যে পালা আছে, সেখান থেকেই ছবির গল্প। ফলে কাজটি বেশ কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। সেজন্যই এতটা সময় চলে গেলো।’
জানা যায়, ৫০০ বছর আগে ৯ বছর বয়স হলেই সমাজের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ে দিতে হতো। কাজল রেখার বয়স যখন ৯ হয়, তখন এক নতুন গল্প তৈরি হয়। সেটিই উঠে আসবে সেলিমের এবারের সিনেমায়।
গিয়াস উদ্দিন সেলিম জানান, নতুন বছরের প্রথমাংশে ছবিটি মুক্তি দিতে চান তিনি। তবেই তার যুগের ক্লান্তি দূর হবে। তার আগে নয়!