দুর্গা পূজার কারণে ১৫ দিনেই এসএসসির লিখিত (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা শেষ করতে চেয়েছিল শিক্ষা বোর্ড। প্রায় ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর রুটিনও সাজানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী, আজ মাদরাসা ও কারিগরিসহ ১০ শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা শেষ হচ্ছে।
তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড। প্রশ্নফাঁসের কারণে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর এ পরীক্ষা শেষ করতে লাগবে আরও ১৫ দিনের বেশি।
কোভিড মহামারী, বন্যা, প্রশ্নপত্র বদলসহ নানা কারণে আলোচনায় ছিল এবারের এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু সব বিতর্ক ছাপিয়ে যায় দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে কুড়িগ্রামের ভুরাঙ্গামারীর প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তথা শিক্ষককের নজিরবিহীন কর্মকাণ্ডে ১ লাখ ৬৮ হাজার শিক্ষার্থী ও পরিবারের জীবনে নেমে এসেছে ভোগান্তি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকজন ব্যক্তির অসাধু আচরণের কারণে কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর জীবনে খড়গ নেমে এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি দুঃচিন্তায় পড়েছেন সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বড় পূজার আনন্দ মাটি করে দিয়েছে স্থগিত পরীক্ষার কারণে।
এর আগে এসএসসির প্রথম দিনে নড়াইলের কালিয়াসহ ৩ পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্ন পরিবর্তন হয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়। এর কারণে যশোর বোর্ডের বাংলা দ্বিতীয়পত্রের এমসিকিউ পরীক্ষা স্থগিত করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড।
শুক্রবার স্থগিত সে পরীক্ষা পূণরায় ১ লাখ ৬২ হাজার পরীক্ষার্থী দিয়েছে। এরপর গত মঙ্গলবার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় চারটি ও দুটি বিষয়ের প্রশ্ন পরিবর্তন করে পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড।
একটি পরীক্ষার জন্য একাধিকবার প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক চাপ তৈরি করে। এমনটি মনে করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, একটি বিষয় পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের এক ধরনের মানসিক প্রস্তুতি থাকে। পরীক্ষা শেষ করে পরের বিষয়ের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। বাংলা বই পড়ে শেষ করে সেই পরীক্ষা আবার দিতে তাদের দুই বার একই বই শেষ করতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ধৈয্যহানি ও মানসিক চাপ পড়ে। পরীক্ষা স্থগিতের কারণে সুনাম নষ্ট হয়েছে তা নয়। শিক্ষাবোর্ডের আর্থিক ক্ষতি কয়েক কোটি টাকা।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় প্রথম পর্যায়ে চারটি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড। এরপর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা (উচ্চতর গণিত ও জীববিদ্যা) নির্ধারিত প্রশ্নপত্র বদলে পরীক্ষা নেওয়া হয়। বোর্ডের সূচি অনুযায়ী গণিত (আবশ্যিক) ১০ অক্টোবর, কৃষি শিক্ষা (তাত্ত্বিক) ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ অক্টোবর (তত্ত্বীয়) রসায়ন ও ১৫ অক্টোবর পদার্থ বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিটি পরীক্ষায় হবে বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এক্ষেত্রে ব্যবাহারিক পরীক্ষার তারিখ ও পরিবর্তন করেছে শিক্ষা বোর্ড। ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৬ অক্টোবর শুরু হবে। শেষ হবে ২০ অক্টোবর। অন্যদিকে বাকি দশ শিক্ষাবোর্ডের ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু ১০ অক্টোবর। শেষ হবে ১৫ অক্টোবর।
বিক্রি করতেই ফাঁস হয় এসএসসির প্রশ্নপত্র। এ ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থানায় মামলা হয়। মামলায় উপজেলার নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রের সচিব মো. লুৎফর রহমান, সহকারী শিক্ষক মো. জোবাইর হোসেন ও মো. আমিনুর রহমান, বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী মো. আবু হানিফসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেন্দ্রসচিব লুৎফর রহমান এবং শিক্ষক জোবাইর হোসেন ও আমিনুরকে। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকজনকে রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, স্থগিত পরীক্ষা আায়োজনে চরম সতর্ক অবস্থানে আছে শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের ৮ জেলার সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের প্রস্ততি নেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি এমন অনাকঙ্খিত ঘটনা পূণরাবৃত্তির সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। প্রতি বছর সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু করোনার কারণে পেছানো হয় পরীক্ষা। এরপর ১৯ জুন পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কারণে তা আবারও পিছিয়ে যায়। এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডসহ ১১টি শিক্ষাবোর্ডের আওতায় মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন পরীক্ষা দিচ্ছে।