শষ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁ। এ জেলার বদলগাছী উপজেলা সবজি এলাকা হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এ উপজেলায় সবজির পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে মসলা ও নানা জাতীয় ফলের বাগান। চাষাবাদে বাড়ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার। এতে করে বাড়ছে ফল ও ফসলের উৎপাদন। লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি স্মার্টফোন ব্যবহারে স্মার্ট কৃষকের সৃষ্টি হয়েছে। একজন কৃষি প্রেমী কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান আলী। যার হাত ধরে কৃষিতে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বদলগাছী উপজেলার এ কৃষি কর্মকর্তা।
২০১৬ সালে ১ মার্চে কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। গত প্রায় ৭ বছর কর্মস্থল জীবনে কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি কৃষিতে উদ্বৃদ্ধ করণের মাধ্যমে এবং কৃষিকে এগিয়ে নিতে অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন।
জানা যায়, উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ৪৫৪ হেক্টর। বসতবাড়ি সহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি হওয়ায় গত সাত বছরে জমির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩৫ হেক্টর। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে প্রায় ২৫ হেক্টর মাল্টা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই দশমিক ২৫ হেক্টর জমিতে কমলার আবাদ হয়েছে। যা পূর্বে আবাদ করা হয়নি। ড্রাগনের আবাদও শুরু হয়েছে। এছাড়া বরই ও অসময়ে তরমুজ চাষসহ বিভিন্ন ফলবাগান গড়ে উঠেছে। এ কয়েক বছরে ফসল আবাদের নিবিড়তা শতকরা চার ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে
উন্নয়ন সহায়তার আওতায় ৫০শতাংশ ভর্তূকীতে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে যন্ত্রপাতি বিতরণের মাধ্যমে কৃষিতে যান্ত্রিকীরণ করা হয়েছে। ১২জন যুবককে যান্ত্রিকীকরণ বিষয়ের ওপর মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। বিভিন্ন কৃষক গ্রæপে বিনামূল্যে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত পরামর্শ, প্রদশর্ণী, মাঠ দিবস, বসতবাড়ির সামনে পুষ্টি বাগান ও প্রশিক্ষণসহ ইত্যাদির মাধ্যমে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগীতা করা হয়েছে। কেঁচো সার ও ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হচ্ছে।
বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদনে জৈব বালাইনাশক ও জৈব সার ব্যবহার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রয়েছে। অপ্রচলিত ফসল লতি কচু, পানি কচু, ওল কচু, গাছ আলু ও মিষ্টি আলু চাষ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য দলগত আলোচনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার প্রচারণা করা হয়েছে।
বীজ উৎপাদনকারী কৃষক দল গঠন করে বীজ বিক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক কৃষক নিয়ে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা ধান, গম, পাট, সরিষা, আদা, হলুদসহ বিভিন্ন ফসলাদি উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারবেন। পানি সাশ্রয়ী ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে ৮২৫ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হলেও এখন ১ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। এছাড়া ৮৩০ হেক্টর জমিতে গমের বিপরীতে ৯০০ হেক্টর আবাদ হচ্ছে। অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে স্মার্টফোন ব্যবহার করে কৃষকরা ফসল উৎপাদনে সচেতনা বেড়েছে।
উপজেলার প্রধানকুন্ডি গ্রামে রাইয়্যান এগ্রো ফার্মের উদ্যোক্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ২০১৯ সালে ফার্মের যাত্রা শুরু হয়। এ ফার্মের আওতায় প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে মাল্টা, কমলা, আম, বরই ও পেয়ারাসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশী ফলের বাগান রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন রকম দেশি-বিদেশি মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে। চাষাবাদে কৃষিকে আধুনিকায়নের লক্ষে কৃষি অফিস থেকে প্রায় ১ বিঘা জমিতে পলিনেট হাউস তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে আগামী কিছুদিনের মধ্যে চাষাবাদ শুরু হবে।
পলিনেট হাউসে অফসিজন (অসময় মৌসুম) ক্যাপসিকাম, সাম্মাম ফল (রকমেনন) সহ বিদেশি ফল চাষ করা হবে। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। বলা যায়- কৃষিতে উৎসাহিত করতে কৃষি অফিস থেকে ব্যাপক সহযোগীতা পেয়েছি।
ভাতশাইল গ্রামে যুব এগ্রো ফার্মের উদ্যোক্তা পলাশ হোসেন। তিনি বলেন, গত তিন বছর থেকে নিজস্ব ৬ বিঘা জমিতে মাল্টা, কমলা, আম বাগান ও নার্সারি করেছি। আরো দুই বিঘা ইজারা নেওয়া হয়েছে। অর্গানিকভাবে চাষাবাদের চেষ্টা করছি। বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে এবং লাভবান হচ্ছি। অনেকেই এখন কৃষিতে উদ্বৃদ্ধ হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান আলী বলেন, কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে কৃষিকে আধুনিক ও যান্ত্রিকীকরণ এবং স্মার্ট উদ্যোক্তা কৃষক তৈরি অব্যহৃত রাখা হয়েছে। ড্রাগন, মাল্টা, কমলা ও পেয়ারা সহ দেশি-বিদেশি ফল ও ফসল উৎপাদন করে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষ হচ্ছে। আমি উপজেলায় যোগদানের আগে এসব হতো না।
তিনি বলেন, প্রায় ১০ জন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে যারা বিভিন্ন সময় ফল ও ফসল উৎপাদনসহ এবং বাজারজাত করে সফল হচ্ছে। এসব উদ্যোক্তারা কীটনাশকুমক্ত নিরাপদ ফল ও ফসল উৎপাদনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে আগাম কৃষি আবহাওয়া বিষয়ে জানতে পারছে।
আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে কিন্তু ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়া বাসতবাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান করে সবজির চাহিদা পুরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পেও পারিবারিক পুষ্টি বাগান তৈরি করা সহ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইনশাআল্লাহ আমাদের দেশে একদিন কৃষকরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, ফলন আরো বাড়বে।
ধন্যবাদ স্যার আমাদের সাথে থেকে আপনারা মূল্যবান মন্তব্যে জন্য।