২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন ও মজুদ পূর্বাভাস বাড়িয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিল (আইজিসি)। সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রেইন মার্কেট শীর্ষক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস বাড়ানো হয়। এ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি বাড়বে গম ও যব উৎপাদন। ফলে ভুট্টা উৎপাদন কমলেও তা বৈশ্বিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছে আইজিসি।
আইজিসির প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমে সব মিলিয়ে ২২৫ কোটি ৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে। আগস্টে ২২৪ কোটি ৮০ লাখ টন উৎপাদনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। তবে পূর্বাভাস বাড়ানো হলেও ২০২১-২২ মৌসুমের চেয়ে নিম্নমুখী থাকবে। ওই মৌসুমে ২২৯ কোটি ১০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল।
গত মৌসুমের তুলনায় এবার ভুট্টার বৈশ্বিক উৎপাদন কমার আশঙ্কা করছে আইজিসি। উৎপাদনের পরিমাণ ৫ কোটি ১০ লাখ টন কমতে পারে। এছাড়া সরঘাম (এক ধরনের শস্য) উৎপাদন কমবে প্রায় ২০ লাখ টন। তবে গম উৎপাদনের প্রক্ষেপণ এক কোটি টন বাড়ানো হয়েছে। আর যব উৎপাদনের প্রক্ষেপণ বাড়ানো হয়েছে ৩০ লাখ টন।
আইজিসির দেয়া তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ মৌসুমের পর এবারই প্রথমবারের মতো খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার কমতে যাচ্ছে। পশুখাদ্য উৎপাদনে ভুট্টার চাহিদা কমে যাওয়ায় গত মৌসুমের তুলনায় ব্যবহারে ১ শতাংশ নিম্নমুখিতা তৈরি হবে। এছাড়া খাদ্যপণ্য ও শিল্প খাতে ব্যবহার স্বাভাবিকের তুলনায় কমবে।
আইজিসি বলছে, সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমায় ২০২২-২৩ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুদ এক বছরের ব্যবধানে ৩ শতাংশ কমতে পারে। মৌসুম শেষে মজুদের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৮ কোটি ৭০ লাখ টন।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ মৌসুমে সয়াবিন উৎপাদন ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। গত মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন ১০ শতাংশ বেড়ে ৩৮ কোটি ৭০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে।
এবার শস্য আবাদের পরিমাণ বাড়বে বলেও জানিয়েছে আইজিসি। দক্ষিণ আমেরিকা বিশেষ করে ব্রাজিল ও প্যারাগুয়েতে আবাদে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ শিথিল হওয়ায় পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে মোড় নিয়েছে।
এদিকে ২০২১-২২ মৌসুমে রেকর্ড উৎপাদন হলেও ২০২২-২৩ মৌসুমে চাল উৎপাদন কমার পূর্বাভাস রয়েছে। আইজিসি বলছে, শস্যটির উৎপাদন ২ শতাংশ কমে ৫০ কোটি ৮০ লাখ টনে নামবে। ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোয় বৈরী আবহাওয়া উৎপাদন কমার ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে।
খাদ্যশস্য ও তেলবীজের মূল্যসূচকের মাধ্যমে আইজিসি এসব পণ্যের বৈশ্বিক বাজারদরের একটি চিত্র তুলে ধরে। আগস্টের পর থেকে পাঁচ সপ্তাহে মূল্যসূচক ২ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ২০২১-২২ মৌসুমের তুলনায় বেড়েছে ১১ শতাংশ।
এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) দানাদার খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। কূটনৈতিক চুক্তির কারণে ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর খুলে যাওয়ায় খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে বাজারদর নেমে আসে। পাশাপাশি উত্তর আমেরিকা ও রাশিয়ায় ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন দাম কমাতে সহায়তা করেছে।
তবে গত মাসে ভুট্টার মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপের দেশগুলোয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে শুষ্ক আবহাওয়া শস্যটির উৎপাদন ও বৈশ্বিক সরবরাহে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এ কারণেই মূলত দাম বেড়েছে।
এফএও বলছে, উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভুট্টা উৎপাদন ব্যাপক ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় উৎপাদন গত পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কমতে পারে। এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মোট বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদনে।
এদিকে দাম কমলেও খুব সহসাই চলমান সংকট থেকে মুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কারণ নিকট ভবিষ্যতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিবর্ণতার ছাপ, মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা এবং আকাশচুম্বী সারের দাম আগামী মাসগুলোয় উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে মারাত্মক চাপের মধ্যে পড়তে পারে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা। খাদ্যপণ্যের দাম কমার বিষয়টিকে স্বল্পমেয়াদি হিসেবেই ধরে নিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে জাকারবার্গ বলেন, খাদ্যশস্য ও তেলবীজ সরবরাহ খাতে আগামী তিন বছরেও কাটবে না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। আগামী বছরের জন্য আমাদের বেশকিছু বিষয় চিহ্নিত করতে হবে। পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসবে, আর এ পরিবর্তন নেতিবাচক দিকে যাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় আগে থেকেই আমাদের সচেতন থাকতে হবে।