বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপে পড়েছে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা। জ্বালানি সঙ্কট ও আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারের অস্থিরতায় ক্রমেই জটিল রুপ নিচ্ছে পরিস্থিতি। বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেছে সার ও কৃষিপণ্যের সরবরাহ চেইনেও। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় অভ্যন্তরীণ নানা প্রভাবক এ সঙ্কটকে স্থানীয় পর্যায়ে আরো মারাত্মক করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আসন্ন দিনগুলোয় খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কায় নীতিনির্ধারকরাও এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এ মুহূর্তে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, দেশে খাদ্য আছে, তবে বাজার ব্যবস্থায় সরবরাহে চরম দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণে খাদ্য সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। কারো অনেক আছে, আবার কারো নেই। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পথ খুঁজতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ফুড গভর্ন্যান্স ছাড়া খাদ্যনিরাপত্তা সম্ভব নয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো আইয়েলার সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য সঙ্কট বিশ্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেছেন, যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে আমরা সে ধরনের ঝুঁকির মধ্যে যাব না। তবে কৃষি সবসময়ই ঝুঁকিতে থাকে। বিষয়টি আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, বড় দুর্যোগ না হলে বিশ্বের যেখানেই খরা হোক, যুদ্ধ হোক; বাংলাদেশের মাটিতে ফসল হবে। খাদ্য সঙ্কটের শঙ্কা নেই।
অদৃশ্য করোনাভাইরাস সারাবিশ্বের অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। সেই সঙ্কট কাটিয়ে উঠার আগেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, ডলার সঙ্কট, তেল উত্তোলন ও বিতরণে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সারাবিশ্বের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে ক্ষুধা এখন সারা বিশ্বকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাপী খাদ্যোৎপাদন কমতির দিকে। ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় পড়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। বাইরে থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর দেশগুলোয় খাদ্য ঘাটতি বড় সঙ্কটের আকার নেবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে থাকা এসব দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশেরও। বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে এফএও। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত সংস্থাটির ‘ক্রপ প্রসপেক্টস অ্যান্ড ফুড সিচুয়েশন’ শীর্ষক প্রান্তিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৫টি দেশে ঘাটতিজনিত মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা এখন সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে এশিয়া মহাদেশভুক্ত দেশ আছে ৯টি, বাংলাদেশসহ যার তিনটিই আবার দক্ষিণ এশিয়ার। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করে এসে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করে দেশের মানুষকে সচেতন করেছেন। এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্যোৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন। এজন্য দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সে বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন তিনি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে চলমান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের এক সংলাপে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিস ম্যালপাসও খাদ্য, জ্বালানি তেলসহ বিশ্বে মহামন্দার বিষয়ে বিশ্বকে সতর্ক করেছেন। বৈশ্বিক এই মন্দার কবলে পড়লে বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করছে এই সংস্থাটি। বিশ্বে ৪৮টি দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ এখন চরম খাদ্য সঙ্কটে আছে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, আগামী বছরে বিশ্বে মহামন্দা দেখা দিতে পারে। মহামন্দার ফলে জ্বালানির চড়া দাম ও লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি হবে। এবারের মন্দা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভয়াবহ হবে। বিশেষ করে মহামন্দায় গরিব মানুষকে নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংক প্রধান।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খাদ্য খাতে ১৫৩টি দেশের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮১ শতাংশ। যার ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির ফলে ধনী দেশগুলোতেও খাদ্যের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আর এফএওর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের আর সব মহাদেশ বা অঞ্চলেই এবার খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবেশি হারে কমবে।
জ্বালানি সঙ্কট এরই মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কৃষি উৎপাদন খাতে আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দামও এখন বাড়তির দিকে। মূল্যস্ফীতির কারণে অন্য খাতগুলোর মতো কৃষি উৎপাদনেও কৃষকের খরচ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিষয়গুলো এরই মধ্যে দেশে দেশে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
ঘাটতি পূরণে খাদ্য আমদানিকে আরো ব্যয়বহুল করে তুলেছে ডলারের বিনিময় হারের ঊর্ধ্বগতি ও রিজার্ভ সঙ্কট। উপরন্তু বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ডলার রিজার্ভও এখন দিনে দিনে কমে আসছে। ভোক্তাপর্যায়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে চালসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের দামও এখন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
অর্থনৈতিক এ সঙ্কটকেই বাংলাদেশে সম্ভাব্য মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার প্রথম অনুঘটক হিসেবে চিহ্নিত করেছে এফএও। সংস্থাটির বক্তব্য হলো করোনার অভিঘাতে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। সে সময় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্যে যে প্রভাব তৈরি হয়েছিল, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এর মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্যনিরাপত্তা আরো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারেও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে মূল্য পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে খাদ্যের প্রাপ্যতা ও প্রবেশাধিকার-সংক্রান্ত আগেকার যাবতীয় পূর্বাভাসের চেয়েও পরিস্থিতি এখন অনেক বেশি খারাপ। বিশেষ করে খাদ্য ঘাটতি পূরণে আমদানিনির্ভর দেশগুলো এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে। এসব দেশে একদিকে যেমন খাদ্যমূল্যস্ফীতি বাড়ছে অন্যদিকে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নও হচ্ছে ব্যাপক হারে।
বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)। ২০০৯-১৯ পর্যন্ত ১০ বছর সময় নিয়ে দেশের সব জেলার খাদ্যনিরাপত্তার চিত্র বিশ্লেষণ করেছে সংস্থাটি। গবেষণায় পাওয়া ফল সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আইপিসি ক্রনিক ফুড ইনসিকিউরিটি রিপোর্ট’ শিরোনামে প্রকাশ হয়েছে। এতে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে বছরে দুই চার মাস দিনে গড়ে একবেলা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত খাদ্যের অভাবকে তৃতীয় স্তরের বা মধ্যমমাত্রার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বছরে ৪ মাস বা তার বেশি সময় দিনে একবেলা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত খাদ্যের অভাবকে বর্ণনা করা হয়েছে চতুর্থ স্তরের বা গুরুতর খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা হিসেবে। আইপিসির হিসাব অনুযায়ী, দেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখন মধ্যম ও গুরুতর মাত্রার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। এফএওর প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ হার আরো বেড়ে মারাত্মক আকার ধারণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটও (আইএফপিআরআই) মনে করছে, করোনার অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে। সংস্থাটির এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দামে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এ ভারসাম্যহীনতায় আরো প্রভাব ফেলেছে। এতে উন্নয়নশীল দেশ ও তাদের উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্যের হারে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে। বাংলাদেশেও খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাদ্যের সমতা নষ্টের শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গ্রামীণ খানাগুলোয় খাদ্যের পেছনে ব্যয় কমিয়ে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. ফকির আজমল হুদা বলেন, বোরো মৌসুমের জন্য আমাদের হাতে আরো তিন মাস সময় আছে। এ সময়ে সারের মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। পুষ্টির সঙ্কট হলেই কিন্তু সেটাকে খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্কট হিসেবে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে পুষ্টির ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল, বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্যের অব্যাহত দরবৃদ্ধি ও সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাতের প্রভাব দেশে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও নানা সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে দেশের জনসংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সে হারে খাদ্যোৎপাদন বাড়েনি। বিবিএস ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে সোয়া ৫ শতাংশের বেশি। যদিও এ সময় খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশেরও কম। দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রধান দুই খাদ্যশস্য চাল ও গম উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টনে।
জনসংখ্যা তথা চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে উৎপাদন সেভাবে না বাড়ায় দেশে খাদ্যশস্যের আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে। যদিও বিশ্ববাজারে মূল্যের ঊর্ধ্বমুখিতা ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে এখন চাহিদামাফিক আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরেও দেশে ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টন চাল ও গম আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম বাড়তির দিকে থাকায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার টনে।
দেশে খাদ্য ঘাটতি নিয়ে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব। দীর্ঘায়িত খরায় ব্যাহত হয়েছে আমন মৌসুমের উৎপাদন। এর আগে গত মে মাসে সিলেট অঞ্চলের বন্যায় বোরো ধানসহ ব্যাপক ফসলহানির শিকার হয়েছেন কৃষক। এফএওর হিসাব অনুযায়ী, ওই সময়ের বন্যায় অন্তত ৭২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাণ ও সম্পদহানির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষি অবকাঠামোও ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর উপস্থিতিকেও দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু অবস্থান করছে বাংলাদেশে। এতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের উপস্থিতিকে কক্সবাজারের খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবন-জীবিকা চাপে পড়ার প্রধানতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এফএও মনে করছে, এবার তা গোটা দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা সবসময়ই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সঙ্কট থেকে উত্তরণে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারি খাত, উৎপাদক এবং ভোক্তাদের সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্বের কিছু অংশে সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বাড়ছে। তিনি বলেন, সরবরাহ শৃঙ্খলা বিঘ্ন হওয়ায় খাদ্যের দামও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যনিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসহ সংশ্লিষ্ট সব খাতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।