২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে চীন ৪১ হাজার ৭১০ কোটি ইউনিট চিপ আমদানি করেছে। বছরওয়ারি হিসাবে তা ১২ দশমিক ৮ শতাংশ কম। ২০২১ সালে চীনে চিপ আমদানি বেড়েছে। এর পেছনে প্রযুক্তি নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধের পাশাপাশি চিপ সংকটের কারণে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্টক করার হার বেড়েছিল।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে চীনের চিপ আমদানি ১২ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। সম্প্রতি দেশটির কাস্টমস প্রকাশিত তথ্যসূত্রে এটি জানা গিয়েছে। চলমান চিপ সংকট, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ ও বিধিনিষেধের কারণে আমদানিতে এ বিরূপ প্রভাব পড়েছে। খবর রয়টার্স।
কাস্টমসের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটি যেখানে ৫ হাজার ৪৩০ কোটি ইউনিট চিপ আমদানি করেছিল, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ৪ হাজার ৭৬০ কোটি ইউনিট। তথ্য প্রতিবেদনটি চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশ করার কথা থাকলেও কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসের কারণে সেটি দেরিতে প্রকাশিত হলো। তথ্যানুযায়ী চিপ আমদানি এখনো নিম্নমুখী।
দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত আলাদা তথ্যানুযায়ী, বছরওয়ারি হিসাবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চিপের উৎপাদন ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ২ হাজার ৬১০ কোটি ইউনিটে নেমে এসেছে। অন্যদিকে বছরের প্রথম নয় মাসে মোট উৎপাদন ১০ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ২৪ হাজার ৫০০ কোটি ইউনিটে নেমে এসেছে। চীনের চিপ শিল্পের উন্নয়নে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এখনো বেইজিংয়ের প্রধান লক্ষ্য। কেননা ওয়াশিংটন বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বাধা দিতে চাইছে, যার অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাইডেন প্রশাসন চিপ ও প্রযুক্তি রফতানি বন্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং আইন কার্যকর করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞার কারণে চিপ উৎপাদনে ব্যবহূত যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো ইয়াংতজে মেমোরি টেকনোলজিস (ওয়াইএমটিসি), সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনসহ (এসএমআইসি) বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে যন্ত্রাংশ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর থেকে চীন থেকে রাশিয়ায় আমদানীকৃত সেমিকন্ডাক্টরে ত্রুটির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে শুরু করেছে। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন থেকে আমদানি করা ৪০ শতাংশ চিপই ত্রুটিযুক্ত ছিল, মার্চের আগে যার হার ছিল মাত্র ২ শতাংশ।
ত্রুটিপূর্ণ চিপ আমদানির বিষয়ে কমারস্যান্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়টি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনার বস্তুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেদনে চীন থেকে ত্রুটিপূর্ণ সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে অনেক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের মেশিন, প্রযুক্তি, সফটওয়্যার ও নকশা ব্যবহার করতে পারছে না। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যন্ত্রাংশের সরবরাহ নিশ্চিতে অপরিচিতদের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। অন্যদিকে চীনের বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাইডেন প্রশাসন। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংবলিত চিপ ও প্রযুক্তি রফতানি বন্ধে আইনও কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যে কারণে অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ উৎপাদনে পিছিয়ে যাচ্ছে চীন।
গত কয়েক বছর চীন ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতি হলেও ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ নিয়ে বেইজিং প্রথম থেকেই নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে। চীন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দেখতে পায়, নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করলেও তারা কালো তালিকাভুক্ত হতে পারে। এ কারণে অধিকাংশ চীনা প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি মেনে চলার পাশাপাশি রাশিয়াপন্থী গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে সূক্ষ্মভাবে কাজ করছে।