বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ১ মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা। ২ মাস আগে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮০-৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর গত বছর একই সময়ে এ চিনি বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা।
কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. আলী হোসেন বলেন, আমাদের চাহিদা আছে ৩০ গাড়ি চিনির। কিন্তু আমাদের ১০ গাড়ি চিনি দেওয়া হচ্ছে। এতে পাইকারি বাজারে পণ্যটির সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মিল পর্যায়ে দাম বাড়ায় পাইকারিতেও দাম বেড়েছে।
চাল, ডাল, তেল ও ডিমের মতো চিনিও দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। বাজারে এখন খোলা চিনি ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি করা হয় ৯৫ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে কখনো চিনির দাম ১০০ টাকার বেশি ওঠেনি।
সঙ্গে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও আদার দাম বেড়েছে আরেক দফা। পাশাপাশি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা।
তবে চালের বাজার গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশান, কালাচাঁদপুর, জোয়ারসাহারা ও রামপুরা বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে দেশের ব্যবসায়ীরা যৌক্তিক ভাবে বাড়িয়েছেন কিনা তা দেখতে হবে। কারণ বিক্রেতাদের অতি মুনাফা করার প্রবণতা আছে।
তারা সুযোগ পেলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটে। চিনির দাম বাড়ার পেছনে এমন কিছু আছে কি না তা দেখতে হবে। পাশাপাশি বাজারে অন্যান্য একাধিক পণ্যের দাম বেড়েছে। সে সব পণ্যের দাম কমাতে সংশ্লিষ্টদের সজাগ ভূমিকা রাখতে হবে।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাজারে পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে প্রতিদিন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অধিদপ্তরের প্রত্যেক সদস্য ভোক্তার স্বার্থে কাজ করছেন।
সরকারি বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির গতকালের বাজারদরের তথ্য বলছে, রাজধানীতে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়।
এদিকে বাজারে খোলা আটা প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ৫৫ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে, গত সপ্তাহে এই ময়দা বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে চাল। চিকন চাল (মিনিকেট) কেজিপ্রতি ৭৫ টাকায়, ব্রি-২৮ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় এবং নাজিরশাইল বিক্রি করা হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। লিটারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩.৭৫ শতাংশ, পাম তেলের (সুপার) দাম বেড়েছে ৩.১১ শতাংশ।
আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ১৬০ টাকা এবং দেশি আদা ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর আমদানি করা রসুন বিক্রি করা হচ্ছে ১২০ টাকা এবং দেশি রসুন ৮০ টাকা কেজি দরে। ডিম প্রতি ডজন ১৪৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
মাছের বাজার
মাছের বাজারেও ক্রেতাদের কিছুটা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। দেড় কেজি ওজনের রুই প্রতি কেজি ২৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, বড় রুই প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৪০০ টাকায়। বড় আকারের কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কাঁচকি মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের কই মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, পাবদা আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
সবজির বাজার
শীতের আগাম সবজি বাজারে এসেছে আগেই। সরবরাহও স্বাভাবিক। কিন্তু দাম বাড়তি। বলতে গেলে কোনো সবজিই প্রতি কেজি ৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। গোল বেগুন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা; পটোল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা; শিম ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, পাকা টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৫০ টাকা, লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।