চুল পড়া বহুল পরিচিত একটি সমস্যার নাম। নানা কারণে আমাদের চুল পড়তে পারে। বায়ুদূষণ, ধুলাবালি ও আবহাওয়ার পরিবর্তনসহ নানা কারণে চুল পড়ার হার বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাথার ত্বকে এমন কিছু চর্মরোগ হয়, যার কারণে অনেক চুল পড়ে যায়। তবে কিছু আয়ুর্বেদিক ব্যবহারে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
নিমপাতা
চুল ঝরে যাওয়া কমাতে এবং চুলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিমপাতার আয়ুর্বেদিক গুণাগুণ চিরায়ত। এই পাতা স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলের গোড়া শক্ত করে। আপনি নিমপাতা বেটে বা পানিতে ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। নিমপাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান স্ক্যাল্পে হওয়া ইনফেকশনের জন্য ভীষণ উপকারী। নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহারে চুল পড়া কমবে। চার কাপ পরিমাণ পানিতে এক মুঠো নিমপাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর পানিটা ঠান্ডা করে এতে পুরো মাথা (বিশেষ করে স্ক্যাল্পে যেন ভালো করে পৌঁছায়) ভিজিয়ে নিন। অবশ্যই শ্যাম্পু করার পরে নিমের পানি মাথায় ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে তিনদিন এই পানি ব্যবহারে স্ক্যাল্পের ইনফেকশন কমে যাবে। তাজা নিম পাতা মোটামুটি মিহি করে বেটে সামান্য পরিমাণে গরম পানি মিশিয়ে নিন। এবার এই পেস্টটি চুলে আর স্ক্যাল্পে লাগাতে পারেন। আধঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরার এনজাইম চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে৷ এর অ্যালকেলাইন প্রোপার্টিজ স্ক্যাল্পের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে। অ্যালোভেরা ব্যবহারে চুল পড়া এবং তালু অস্বাভাবিক ফাঁকা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল স্ক্যাল্পে মাখিয়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানিতে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন থেকে চারবার এভাবে ব্যবহার করবেন ভালো ফল পাওয়ার জন্য।
মেথি
মেথিতে এমন কিছু উপাদান আছে যা চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া আটকায়, চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং চুল করে ঘন কালো। এক গ্লাস পানিতে এক মুঠো মেথি দানা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ভেজা মেথি বেটে পেস্ট তৈরি করে চুলে ও স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নেবেন। ৪০ মিনিট পরে পানি দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে নিবেন। সপ্তাহে তিনদিন এভাবে ব্যবহার করবেন, যদি প্রতিদিন করে টানা এক মাস ব্যবহার করেন তাহলে আপনার চুল অনেক ঘন হবে।
আমলকি
চুল পড়া বন্ধ করার আয়ুর্বেদিক উপায়গুলোর মধ্যে অনেক উপকারী আমলকি। এটি চুলের বৃদ্ধি ও সতেজতার জন্যও সমানভাবে উপকারী। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা চুলকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয় এবং মাথার ত্বককে সুস্থ রাখে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। নিয়মিত আমলকির রস পান এবং আমলা অয়েল ব্যবহারের হেয়ার ফল কমাতে সাহায্য করে। পরিমাণমতো আমলা পাউডার, হেনা পাউডার, এবং টকদই একসঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে দুই ঘণ্টা রেখে দিন। এরপরে শুধু পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। আমলকির রস আর লেবুর রস দুটোই ১ টেবিল চামচ করে নিন। এরপর দুটি উপকরণ মিশিয়ে ভালো করে চুলে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে চুল ধুয়ে ফেলুন। আমলা পাউডার আর লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ঘন একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এবারে পেস্টটি স্ক্যাল্পে আর চুলে ঘষে ঘষে লাগান। এরপরে শাওয়ার ক্যাপ বা তোয়ালে দিয়ে এক ঘণ্টা মাথা ঢেকে রাখুন। তারপর শুধু পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।
শিকাকাই
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি, কে, এবং ডি-তে ভরপুর শিকাকাই চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। তার সঙ্গে সঙ্গে এটি চুলের তেল-ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলে। শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে পরিচিত এই উপাদানটি স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল অটুট রাখে। চুলের দৈর্ঘ্য বুঝে পরিমাণ মতো শিকাকাই পাউডার নিয়ে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে গোসলের সময় শ্যাম্পুর পরিবর্তে এই ভেজা পাউডার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন শ্যাম্পুর মতো করে। একদিন পর পর এভাবে ব্যবহার করবেন।
পেঁয়াজ
চুল ঝরে পড়া রোধের জন্য সবচে সহজ আয়ুর্বেদিক উপায় হচ্ছে পেঁয়াজ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও সালফার। এটি স্ক্যাল্পে বাসা বাঁধা জীবাণু ও ইনফেকশনকে ধ্বংস করে। ফলে চুল পড়া কমে যায়। একটি পেঁয়াজ থেকে রস বের করে সেটা সরাসরি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পরে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই-তিনবার মাথায় পেঁয়াজের রস লাগাতে হবে।
ভৃঙ্গরাজ
ভৃঙ্গরাজ শুধু মাথা ঠান্ডা রাখে না, এটি নতুন চুল গজাতে ও চুল ঘন করতেও সাহায্য করে। কয়েকটি ভৃঙ্গরাজ পাতা রোদে শুকিয়ে নারিকেল তেলের বোতলে ডুবিয়ে রাখুন। এরপরে তেলটা দুইদিন রোদে রাখুন, তেল আস্তে আন্তে হালকা সবুজ হয়ে যাবে। এই তেল রাতে ঘুমানোর আগে স্ক্যাল্পে ও চুলে ম্যাসাজ করে নিন, সকালে চুল ধুয়ে ফেলবেন।
রিঠা
চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুলের ঘনত্ব ঠিক রাখতে মাথায় রিঠা ব্যবহার করতে পারেন৷ কয়েকটি রিঠা ফল সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সিদ্ধ করে নিবেন। ঠান্ডা করে শ্যাম্পুর মতো করে ব্যবহার করবেন শ্যাম্পুর পরিবর্তে। প্রথমে অর্ধেক রিঠা মাথায় ৫ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে বাকি রিঠা একইভাবে ব্যবহার করুন।
তবে মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পেস্ট ব্যবহার শেষে শ্যম্পু করলে পরে অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।