বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সুড়ঙ্গপথ (টানেল) নির্মিত হচ্ছে বাল্টিক সাগরের ১৩১ ফুট নিচ দিয়ে। অবিশ্বাস্য প্রযুক্তি দক্ষতায় নির্মিতব্য এ টানেল পশ্চিম ইউরোপের দুই দেশ জার্মানি ও ডেনমার্ককে যুক্ত করবে। প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত আছে। তবে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন থেকে সরাসরি গাড়ি বা ট্রেনে জার্মানির হামবুর্গে যাওয়া যায় না। ঘুরে যেতে হয়। এবার সরাসরি দুই শহর যুক্ত হচ্ছে।
এক যুগ আগে এ টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। জার্মানির ফেহমার্ন ও ডেনমার্কের লোল্যান্ড দ্বীপের মধ্যে ফেহমার্নবেল্ট প্রণালির তলদেশ দিয়ে এটি নির্মিত হচ্ছে। এ কারণে এর নাম ফেহমার্নবেল্ট টানেল। ২০২০ সালে শুরু হয় এর নির্মাণকাজ। কয়েক মাসে ডেনমার্ক অংশে অস্থায়ী বন্দরের কাজ শেষ হয়। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি অস্থায়ী কারখানা। ওই কারখানায় বানানো হবে টানেলের জন্য ইট-কংক্রিটের কাঠামো। সব মিলিয়ে বড় আকারের ৮৯টি কাঠামো বানানো হবে। এগুলোকে জুড়ে গড়ে উঠবে মূল টানেল।
এ প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়া ড্যানিশ কোম্পানি ফেমের্নের প্রত্যাশা, ২০২৯ সালে টানেলটি তারা উন্মুক্ত করে দিতে পারবে। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেনরিক ভিনসেন্টসেন বলেন, বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুতে কারখানা উৎপাদনে যাবে। ২০২৪ সালের শুরুতে টানেলের প্রথম কাঠামো বানানো সম্ভব হবে।
সব মিলিয়ে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এ সমুদ্র সুড়ঙ্গপথ। ইউরোপের অন্যতম বড় এ অবকাঠামো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০০ কোটি ইউরো। এটিকে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার চ্যানেলের টানেলের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ১৯৯৩ সালে ওই টানেলের কাজ শেষ হয়। ফ্রান্স-ইংল্যান্ডকে যুক্ত করা ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১ হাজার ২০০ কোটি পাউন্ড। তবে ফেহমার্নবেল্ট টানেলের নির্মাণ পদ্ধতি ছিল একটু ভিন্ন। এটি পূর্বনির্মিত খণ্ড খণ্ড কাঠামো জুড়ে দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ টানেলে থাকছে গাড়ি চলাচলের পৃথক দুটি দুই লেনের সড়ক। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক রেলের দুটি লাইনও থাকছে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ফেমের্নের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর জেনস ওলি ক্যাসলুন্ড বলেন, কোপেনহেগেন থেকে হামবুর্গে যেতে এখন সময় লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা।
টানেল হলে সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টা।
বর্তমানে ফেহমার্ন প্রণালির এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যেতে সময় লাগে ৪৫ মিনিটেরও বেশি। টানেল হলে ট্রেনে মাত্র ৭ মিনিটে এবং গাড়িতে মাত্র ১০ মিনিটে যাওয়া যাবে।
২০০৮ সালে এ টানেল নির্মাণে জার্মানি ও ডেনমার্কের মধ্যে চুক্তি হয়। এরপর নানা বাধা উতরাতে সময় লেগে যায় এক যুগেরও বেশি। জার্মানিতে ফেরি কোম্পানি, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এ টানেল নির্মাণের বিরোধিতা করে। বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ২০২০ সালে জার্মানির ফেডারেল আদালত এসব অভিযোগ খারিজ করে দিলে টানেল নির্মাণের পথ প্রশস্ত হয়।
টানেল নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত থাকবেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। এ টানেলের কারণে কেবল এ দুই দেশই নয়, এতে সুবিধা হবে সুইডেনেরও। মধ্য ইউরোপ থেকে এ টানেলে সুইডেনে যেতে ট্রাক বা বাসের পথ বাঁচবে ১৬০ কিলোমিটার