রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন

টাটা সন্সের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটা মারা গেছেন

প্রতিনিধির / ১৬ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

ভারতের আইকনিক শিল্পপতি ও দেশটির সবচেয়ে বড় শিল্পগোষ্ঠী টাটা সন্সের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটা মারা গেছেন। বয়সজনিত সমস্যা নিয়ে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। বুধবার রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, গত সোমবার একবার রতন টাটার মৃত্যুর খবর চাউর হয়েছিল। তবে সামাজিক মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়েছিল যে, খবরটি ভুয়া। আর তিনি হাসপাতালে নিয়মিত চেকআপের অংশ হিসেবে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুদিন না ঘুরতেই সেই গুঞ্জনই সত্য হলো।

ওই পোস্টে জানানো হয়েছিল, তাঁর অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘সম্প্রতি আমার স্বাস্থ্য নিয়ে নানা জল্পনা রটেছে। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাই, এ সব খবরই ভুয়া। বিগত কয়েক দিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে নিয়মমাফিক চেক-আপের জন্য হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি সুস্থ আছি।’

রতন টাটার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে দেওয়া এক বিবৃতিতে টাটার চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন বলেন, ‌‘এ বড় ক্ষতি ও দুঃখের বিষয় যে, আমাদের আজ রতন নাভাল টাটাকে বিদায় জানাতে হচ্ছে, যিনি এক অন্য মাত্রার নেতা এবং শুধু টাটা গ্রুপের গড়ে ওঠায় নয় গোটা জাতির গড়ে ওঠায় যাঁর অবদান রয়েছে।’

ভারতের বিখ্যাত টাটা গ্রুপের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ১৯৯১ সালে। ওই মেয়াদে ২০১২ সাল পর্যন্ত এ দায়ত্বি পালন করনে। এর পর আবার একই দায়িত্বে ফেরেন ২০১৬ সালে। সবোর অবশ্য এক বছরের জন্য। তাঁর পিতামহের প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানকে শুধু সামনে এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। শত বিলিয়ন ডলারের এই শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার হয়েও রতন টাটা একটি সাধারণ জীবনই যাপনের চেষ্টা করতেন তিনি। নানা সামাজিক উদ্যোগে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত বিবৃতিতে এন চন্দ্রশেখরন বলেন, টাটা গ্রুপের জন্য তিনি চেয়ারপারসনের চেয়ে বেশি কিছু ছিলেন। আমার কাছে তিনি ছিলেন একইসঙ্গে অভিভাবক, পথপ্রদর্শক ও বন্ধু। উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি অনুপ্রেরণা দিতেন।

সমাজসেবায় রতন টাটার অবদানের কথা উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য খাতে নেওয়া তাঁর নানা উদ্যোগ অনেক গভীরে প্রভাব ফেলেছে, যার ফল আগামী কয়েক প্রজন্ম পাবে।

রতন টাটা ১৯৯১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৯৯৬ সালে টাটা টেলিসার্ভিসেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৪ সালে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসের যাত্রা করেন। একই বছর, অথ্যাৎ ২০০৪ সালে ব্রিটিশ গাড়ির ব্র্যান্ড জাগুয়ার ও ল্যান্ড রোভার কিনে নেন, যা সে সময় হইচই ফেলে দিয়েছিল। ২০০৯ সালে নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ির ব্র্যান্ড টাটা ন্যানোর যাত্রা করেন। মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে রাখতে যার দাম রাখা হয় ভারতীয় ১ লাখ রুপি।

শুরু থেকেই সমাজসেবামূলক কাজে ছিলেন সামনের সারিতে। দায়িত্ব ছাড়ার পর টাটার ব্যাটন গিয়েছিল সাইরাস মিস্ত্রির কাছে, যার সাথে পরে তাঁর সম্পর্কের অবনমন হয়। শিল্পগোষ্ঠীটির পরিচালনা পর্ষদের অভ্যন্তরীণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিস্ত্রির বিদায় হয়, যিনি পরে ২০২২ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। মিস্ত্রির চলে যাওয়ার পর ভারতের বৃহত্তম এই শিল্পগোষ্ঠীর ইমেরিটাস চেয়ারম্যান হন রতন।

আমৃত্যু ছিলেন সাধারণ মানুষের জন্য নানা সেবামূলক কাজে যুক্ত। প্রাণী অধিকার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রেখেছন। শতকোটিপতি হিসেবে দেখনদারি পছন্দ করতেন না। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেও কুণ্ঠিত হতেন না।

১৯৩৭ সালে জন্মানো রতন টাটা বড় হয়েছেন তাঁর দাদি ণবাজবাই টাটার কাছে। ১৯৪৮ সালে তাঁর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর থেকে তাঁর কাছেই বেড়ে উঠেছেন। পড়াশোনা করেছেন স্থাপত্যবিদ্যায় কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনার ওপর ডিগ্রি নেন। চারবার সম্ভাবনা তৈরি হলেও অকৃতদার এই মহিরুহ প্রেমেও পড়েছিলেন। লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকতে সে প্রেম পরিণয়ে পৌঁছায়নি ভারত-চীন যুদ্ধের কারণে। ১৯৬২ সালের সেই যুদ্ধের সময় মেয়ের পরিবার তাদের মেয়েকে ভারতে যেতে দিতে চায়নি। সমাজে অবদানের জন্য ২০০০ সালে পদ্মভূষণ ও ২০০৮ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হলেও তাঁর মুকুটের সবচেয়ে জ্বলজ্বলে রত্নটির নাম সম্ভবত ভারতের সাধারণ মানুষের ভালোবাসা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ