শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১১ অপরাহ্ন

টানাপড়েন সত্ত্বেও নতুন দিশা খুঁজছে জার্মানির ‘চায়না টাউন’

প্রতিনিধির / ২৩০ বার
আপডেট : রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩
টানাপড়েন সত্ত্বেও নতুন দিশা খুঁজছে জার্মানির ‘চায়না টাউন’
টানাপড়েন সত্ত্বেও নতুন দিশা খুঁজছে জার্মানির ‘চায়না টাউন’

চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ডুইসবুর্গকে অনেকে জার্মানির ‘চীনা শহর’ বলে উল্লেখ করেন। তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা কমাতে ভাবমূর্তি বদলের জন্য মরিয়া এই শহর। ২০১৪ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জার্মানি সফরে এসেছিলেন। তখন এই শহরকে চীনের নতুন ‘সিল্ক রোড’ এর মূল ‘স্টপ’ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পণ্যবাহী ট্রেন সেই সময়ে এসে পৌঁছেছিল বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ বন্দরে। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে বিষয়টা বদলেছে। চীনের উপর নির্ভর করা নিয়ে জার্মানির নানা মহলে উদ্বেগ বেড়েছে।জার্মানি তার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তাইওয়ান থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে জার্মানি সরব হয়েছে।

শিপিং জায়ান্ট কসকো ডুইসবুর্গের বন্দরে একটি প্রকল্পের অংশীদার। চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের সঙ্গে জার্মানির একটি চুক্তি শেষের পরই কসকো সেই জায়গা নিয়েছে।মার্কুস টয়েবার, ডুইসবুর্গের চীনা প্রতিনিধি।মার্কুস জোর দিয়েছেন, চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার তবে তিনি এও স্বীকার করেন যে সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে৷

টাউন হলে একটি সাক্ষাৎকারে এএফপিকে তিনি বলেন, “(প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের) সফরের পর এক ধরনের ‘চায়না হাইপ’ ছিলো।”তিনি স্বীকার করেন, “বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন। তিন, চার বছর আগে যে পরিস্থিতি ছিলো, এখন তেমনটা হবে না।ইউরোপের যে কোনো দেশের তুলনায় জার্মানি এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করেছে চীনে। স্বাধীন গবেষণা সংস্থা রোডিয়াম গ্রুপের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে চীনে ইউরোপীয় বিনিয়োগের এক তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী চারটি কোম্পানি। এগুলি হলো অটোমেকার ফক্সভাগেন, বিএমডাব্লিউ এবং মার্সিডিজ-বেঞ্জ এবং রাসায়নিক জায়ান্ট বিএএসএফ ।

চীনে এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে, জার্মান-রপ্তানি এক বছরের আগের সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ কমেছে। ফক্সভাগেন এবং বিএএসএফ দুটিই চীনে প্রথম ত্রৈমাসিকের বিক্রয় হ্রাসে ভুগছে।আইএনজি অর্থনীতিবিদ কার্স্টেন ব্রেজৎস্কি এএফপিকে বলেন, “ইউরোপ এবং জার্মানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বেশি পক্ষপাতী। চীন মনে করে, জার্মানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশি কাছের।

তার কথায়, সচেতনভাবে হোক কিংবা অজান্তেই ‘মেইড ইন জার্মানি’ জিনিসপত্র কেনার ব্যাপারে চীনের অনীহা থাকবে।” তিনি বলেন, চীনা সংস্থাগুলো এখন এমন পণ্য তৈরি করছে যা জার্মানির প্রতিদ্বন্দ্বী।ডুইসবুর্গে সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল এবং বিতর্কিত প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি ছিলো হুয়াওয়ের সঙ্গে চুক্তি, যা নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ তৈরি হয়।

কর্মকর্তারা এবং কোম্পানি ২০১৭ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিলো, যার লক্ষ্য ছিলো ডুইসবুর্গকে একটি “স্মার্ট সিটি” তে রূপান্তরিত করা কিন্তু চুক্তির মেয়াদ গত বছরের শেষে ফুরিয়ে যায়।টয়েবার বলেন, চুক্তি থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো লাভ হয়নি। এটি “রাজনৈতিক” কারণে না হয়ে “প্রযুক্তিগত” কারণে বন্ধ হয়েছে।ডুইসবুর্গ গেটওয়ে টার্মিনালের একটি বড় নতুন প্রকল্পে চীনা শিপিং জায়ান্ট কসকোর অংশীদারিত্ব রয়েছে।

২০২২ সালের জুনে কসকো এই বন্দরের মালিকের কাছে তার শেয়ারগুলি হস্তান্তর করে, যদিও ডুইসপোর্ট গ্রুপ (মালিক ও অন্যান্য সংস্থাগুলি যে গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত) বলেছিল যে লেনদেনের “কোনো রাজনৈতিক পটভূমি ছিল না”।ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও প্রায় ৩০টি পণ্যবাহী ট্রেন এখনও প্রতি সপ্তাহে ডুইসবুর্গ এবং চীন হয়ে গন্তব্যগুলির মধ্যে রেলপথে চলাচল করে। এটিতে সময় লাগে ১৫ দিন, যা সমুদ্রপথের চেয়ে দ্রুত।

টয়েবার জোর দিয়ে বলেছেন, চীনের সঙ্গে শহরটির ব্যবসার সম্ভাবনার পথ এখনো খোলা। মহামারীর বিরতির পরে চীনা প্রতিনিধিদলগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ফের ডুইসবুর্গে সফর শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, চীনকে এত গুরুত্ব দেয়া ঠিক না। এফডিপির স্থানীয় চেয়ারম্যান স্ফেন বেনেনত্রেউের কথায়, এটি “অবশ্যই” একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ