ডেঙ্গু রোগীর সবচেয়ে বেশি চাপ শিশু হাসপাতালে। এডিস মশাবাহিত এই রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালটিতে ১২ শয্যা বরাদ্দ ছিল। সেপ্টেম্বরে সেটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এর বিপরীতে বর্তমানে ৭৭ শিশু ভর্তি রয়েছে। তাদের অধিকাংশের অবস্থা জটিল। এ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অক্টোবরের ১৭ দিনে দুইশর বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। জায়গার দিতে না পারায় অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
একই অবস্থা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চলতি বছর এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ১ হাজার ৫৬১ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ১৭৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ শিশু। এ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে রোগী দ্বিগুণ বেড়েছে। ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় হাসপাতালে সব প্রস্তুতি রয়েছে। রোগীর সংখ্যা আরও বাড়লে আলাদা ইউনিট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মুগদা হাসপাতালে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১৩৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। এ হাসপাতালে বর্তমানে ১১৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ২২ শিশু। এ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, আগে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে রোগী আসত। এখন রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে রেফার করা রোগী আসছে। তবে ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী আসছে তাদের অবস্থা বেশি জটিল। সব রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতে হাসপাতালে একটি চিকিৎসক টিম কাজ করছে।
মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশিদ উন নবী বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় শিশুদের জন্য ১৫ শয্যা বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। এ কারণে এক শয্যায় দুই শিশুকে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১২৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ৮৫৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এটা চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ। চলতি মাসের দুই সপ্তাহে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাড়ে সাত হাজার রোগী। এ সময় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৫৯২ জনে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮৩ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণবিষয়ক অবহিতকরণ ও মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে ডেঙ্গু। চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে রাজধানীর সরকারি কোনো হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগীর জন্য বরাদ্দ শয্যা ফাঁকা নেই। তার পরও প্রতিদিন বহু রোগী আসছে। ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর কোনোটিতেই শয্যা খালি নেই। কিন্তু তারা রোগীদের ফেরত পাঠাতে পারেন না। যেভাবেই হোক চিকিৎসা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, তাঁরা চান না ২০১৯ সালের মতো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হোক। এ জন্য হাসপাতালগুলোতে আলাদা ডেঙ্গু ইউনিট চালু করতে হবে। পর্যাপ্ত ফ্লুইড সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। রোগী যদি মশারি না নিয়ে আসে, তাহলে হাসপাতাল থেকেই ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘সিটি করপোরেশনগুলোকে বলেছি, দ্রুত হটস্টপগুলোতে মশক নিধন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডাবের পানি খুবই জরুরি, কিন্তু এর খোসা সর্বনাশের কারণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, রাজধানীর মিরপুরসহ যেসব এলাকা ডেঙ্গুর অন্যতম হটস্পট, সেখানকার রোগীদের জন্য মিরপুর লালকুঠি ও মহানগর হাসপাতালসহ কভিডের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক আসাদ শিকদার মারা গেছেন। মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার মারা যান তিনি।
ডেঙ্গু রোগীর শয্যা সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য সচিবও। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে মশা নিরোধ ও হটস্পট এলাকায় অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।