সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন

তিনটি বিভাগীয় সমাবেশ করে উজ্জীবিত বিএনপি

প্রতিনিধির / ১৭৯ বার
আপডেট : বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২
তিনটি বিভাগীয় সমাবেশ করে উজ্জীবিত বিএনপি
তিনটি বিভাগীয় সমাবেশ করে উজ্জীবিত বিএনপি

নানা বাধা, হামলা, ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি ৩টি বিভাগীয় সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সমাবেশের পর তৃণমূল থেকে বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আগামী বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে সরকার বাধা দিলেও আর জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না বলে মনে করছেন তারা। বাধা দিলে দেশের মানুষ আরও বেশি বেশি সমাবেশে অংশ নিবে।দলটির  নেতারা বলছেন- বিভাগীয় সমাবেশই ঢাকার সমাবেশ কেমন হবে তার আগাম বার্তা জানান দিচ্ছে। আত্মবিশ্বাস নিয়েই দেশের মানুষ আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঢাকার মহাসামাবেশে অংশ নিবে। যা অতীতের সকল সমাবেশের রেকর্ড ভঙ্গ হবে।

আগামী বছরের শেষ দিকে ঘোষণা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে সক্রিয় মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিসহ বেশকিছু দাবিতে সরব বিএনপি। ইতিমধ্যে তিনটি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে দলটি। এতে ব্যাপক লোক সমাগম হওয়ায় উজ্জীবিত দলের নেতাকর্মীরা। আগামী শনিবার হবে রংপুর বিভাগীয় গণ-সমাবেশ।

গত ১২ই অক্টোবর চট্টগ্রাম সমাবেশের মধ্যদিয়ে শুরু হয় বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ। সমাবেশের আগের রাত থেকে চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে জড়ো হন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। বিএনপি’র নেতারা বলেন- সমাবেশে যাওয়া নেতাকর্মীদেরকে পথে পথে নানা বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। অনেকেই সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়ে সমাবেশ স্থলে যেতে পারেননি। মাঝপথ থেকে ফেরত পাঠিয়েছে বাধা সৃষ্টিকারীরা। কেউ কেউ বিকল্প পথে কিংবা নানা অজুুহাতে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

১৫ই অক্টোবর ময়মনসিংহে সমাবেশ করে বিএনপি। নির্ধারিত স্থানে সমাবেশের অনুমতি পায়নি দলটি। পরে কর্দমাক্ত, পানি ভর্তি ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট মাঠে ৪০ ট্রাক বালি ফেলে সেখানে সমাবেশ করে বিএনপি। তবে সমাবেশের আগের রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো জেলা। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। অনেকে রাতেই সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। আশপাশের জেলা থেকে ট্রলারযোগে ময়মনসিংহ শহরে  পৌঁছান, অনেকে আবার দূর-দূরান্ত থেকে দীর্ঘপথ হেঁটে, ছোট ছোট যানে ভেঙে ভেঙে শহরে পৌঁছান। এরপর খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন নেতাকর্মীরা।

এদিকে খুলনার সমাবেশের ১ দিন আগেই সড়ক পথে বন্ধ করা হয় গণপরিবহন। নৌপথে বন্ধ রাখা হয় লঞ্চ ও ট্রলার। এতে খুলনাসহ পার্শ্ববতী ১০ জেলার নানুষকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। পুরো ২ দিন  যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে খুলনা। পথে পথে নানা বাধার কারণে তাদেরকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। বাস, লঞ্চ বন্ধ থাকায় ট্রাক, পিকআপ, বালুবাহী ট্রলার ও ট্রেনের ছাদে করে খুলনায় পৌঁছান। অনেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল চালিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। পথে বাধার কারণে অনেকেই লুঙ্গি পরে, কেউ কেউ হাতে ওষুধের প্রেসকিপশন, কেউবা বাজার করার ব্যাগ নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন। গত শনিবার সমাবেশ হলেও তার আগের দিন রাতেই খুলনা সমাবেশস্থল লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

খুলনা বিএনপি নেতাদের দাবি, গত ১৫ বছরে খুলনায় এমন সমাবেশ করতে পারেনি কোনো দল। নানা বাধা আর হামলার পরেও খুলনা বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। সরকার বাধা,  নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তার না করলে পুরো খুলনায়ও মানুষের ঠাঁই হতো না।

এদিকে বিএনপি’র চলমান সমাবেশগুলোতে দলটির বিভিন্ন অংঙ্গসংগঠনের থেকে বহিষ্কৃৃত ও পদত্যাগকারী নেতাকর্মীদেরকেও অংশ নিতে দেখা গেছে। দলের অন্তঃকোন্দল ভুলে সরকার পতনের আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন তারা। ২০১৯ সালের ২২শে জুন বহিষ্কার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন। তবে বহিষ্কার হলেও সম্প্রতি ৩টি বিভাগীয় সমাবেশেই ঢাকা থেকে ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। খুলনার সমাবেশে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীর মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন।  তিনি বলেন- বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এখন আত্মবিশ্বাসী। সরকার পতনের জন্য সবাই রাজপথে নেমেছে। বর্তমানে পদে না থাকলেও কর্মী হিসেবেই রাজপথে আছি। এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত বছরের ২৫শে ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) পদ থেকে সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি। তখন থেকে তিনি অনেকটা অন্তরালে থাকলেও  খুলনায় বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন তিনি। সমাবেশ সফল করতে আগে থেকেই নিজ এলাকায় দলের হয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালান। গত শনিবার সমাবেশের দিন দুপুর ১২টার দিকে সঙ্গীতা সিনেমা হল মোড় থেকে নগর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির’র নেতৃত্বে সমাবেশস্থলে মিছিল আসে। ওই মিছিলে মহানগর, এর অধীন পাঁচটি থানা কমিটির সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ওয়ার্ড কমিটির সাবেক নেতারা অংশ নেন।

খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত মানবজমিনকে বলেন, সরকার অন্যায়ভাবে আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করেছে।  নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তার করেছে। পথে পথে বাধা দিয়েছে। সমাবেশে আসা নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে নানানভাবে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে মানুষ সমাবেশে আসতে না পারে। খুলনায় প্রবেশের প্রতিটি রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মোড়ে মোড়ে হকিস্টিক, রামদা নিয়ে গাড়ি তল্লাশি করেছে, নেতাকর্মীদের নামিয়ে মারধর করেছে। তবুও সকল বাধা অতিক্রম করে মানুষ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। এই দেশের জনগণের ভোট এবং ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে আসছে। দেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। এই সরকারের সঙ্গে দেশের মানুষ আর নেই। খুলনা সমাবেশে জনস্রোতই সেই কথা বলেছে। রাজপথে  নেমে আসা মানুষ সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত ফিরবে না।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, সরকারের বাধা, নির্যাতন, নিপীড়ন চলছেই। সমাবেশকে ঘিরে আরও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটাচ্ছে সরকার। দেশের মানুষ এতো সব সহ্য করেও বানের মতো ভেসে সমাবেশে আসছে।  এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ফলে শত বাধা ডিঙিয়ে  নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যারা আগে রাজনীতি করতো না, এখন তারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপি’র সমাবেশে আসছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা যেসব দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমেছি। একই দাবি এই দেশের সকল মানুষের। এই সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। তাই সরকারের ওপর মানুষ এখন বিরক্ত। এই কারণে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসছে। মানুষ এখন সরকারের বিদায় দেখতে চায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ