প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগাম সতর্ক বার্তার ওপর ভিত্তি করে দুর্যোগ আঘাত হানার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নিলে দুর্যোগের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় চিরাচরিত ‘দুর্যোগ পরবর্তী সাড়াদান ব্যবস্থাপনা’ থেকে ‘আগাম ব্যবস্থাপনা’ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে এনেছি।
তিনি বলেন, দুর্যোগের আগাম সতর্ক বার্তা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ১০৯০ (টোলফ্রি) ইন্টরএ্যকটিভ ভয়েস রেসপনস (আই ভি আর) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২’পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-‘Early Warning and Early Action for All’ তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী বলে আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আকস্মিক বন্যা মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে রিমোট সেনসিং, জিআইএস, রাডার, স্যাটেলাইট তথ্যচিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে বন্যা আসার ৩ থেকে ৫ দিন আগেই বন্যার পূর্বাভাস ও বন্যার স্থায়িত্ব সম্পর্কে সতর্ক বার্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন উন্নত গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড় ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস ও সতর্কতা বার্তা প্রদান সম্ভব হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, আমাদের সরকার এ পর্যন্ত উপকূলে প্রায় ৪ হাজার ২০০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, বন্যা প্রবণ এলাকায় ৪২৩টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র এবং সারাদেশে ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ করেছে। আমরা ‘মুজিব কিল্লা’কে সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করে মানব ও প্রাণিসম্পদের জন্য নিরাপদ ও টেকসই আশ্রয়স্থল করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আমাদের সরকারের বিনিয়োগ, দুর্যোগের পূর্বাভাস ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, নতুন আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন, দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং উদ্ধার কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবীদের নিবেদিত প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি এক ডিজিটে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ফলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন রোল মডেল হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচি প্রণয়নের পথিকৃৎ। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে আগাম সতর্ক বার্তা উপকূলীয় এলাকার জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুত কর্মসূচি (সিপিপি)’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঘূর্ণিঝড় থেকে জানমাল রক্ষায় ‘মুজিব কিল্লা’ নির্মাণ করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্যোগে জনগণের জানমাল ও পরিবেশ রক্ষায় তৃণমূল পর্যায় থেকে সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনের করণীয় নির্দিষ্ট করে, ১৯৯৭ সালে তার সরকারেই প্রথম ‘দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে ভূমিকম্প, পাহাড়ধস, বজ্রপাত, অগ্নিকান্ড, রাসায়নিক ইত্যাদি দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাসহ করণীয় নির্ধারণ করে এ আদেশাবলি ২০১০ ও ২০১৯ সালে হালনাগাদ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন থাকবে বলে আশা করে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।