ঠিকমতো হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানের নীতি পুলিশের কাছে গত ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন কুর্দি তরুণী মাসা আমিনি (২২)। এর তিন দিন পর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় আমিনির। তার পরিবার ও বহু ইরানির অভিযোগ, পুলিশি প্রহারে আমিনির মৃত্যু হয়েছে। তবে দেশটির সরকার ও পুলিশ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এর জেরে দেশটিজুড়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। দেশটির বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক তাণ্ডব চালায় বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দাবি। এরই মধ্যে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের কিছু নার্স ও চিকিৎসক জানান, পুরুষদের চেয়ে নারীদের ক্ষতস্থানগুলো ভিন্ন। পুরুষ বিক্ষোভকারীদের সাধারণত পা, পেছনের অংশ ও পিঠে গুলি করা হয়।বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নারীদের যৌনাঙ্গ, মুখ ও স্তনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান বলছে, ইরানে আহত বিক্ষোভকারীরা গ্রেপ্তারের ভয়ে গোপনে চিকিৎসা করান।
গার্ডিয়ান ইরানের চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ১০ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছেন, গুরুতর আঘাতের কারণে শত শত ইরানি তরুণ স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বিশেষ করে সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুর চোখে গুলি করা হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের ইস্পাহান প্রদেশের এক পুরুষ চিকিৎসক জানান, নারী ও পুরুষ বিক্ষোভকারীদের আলাদাভাবে লক্ষ্য করা হচ্ছে। কারণ তারা নারীদের সৌন্দর্য নষ্ট করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আমি ২০ বছরের এক নারীকে চিকিৎসা করেছি, যার যৌনাঙ্গে দুটি ছড়রা গুলি ছিল। আরও ১০টি ছড়রা গুলি পাওয়া যায় তার ঊরুতে। এগুলো সহজে বের করা গেলেও যৌনাঙ্গে থাকা ছড়রা গুলি বের করা ছিল চ্যালেঞ্জিং, কারণ সেগুলো মূত্রনালি ও যোনির মধ্যের অংশ ছিল। এতে যোনিতে সংক্রমণ হতে পারত।
ওই চিকিৎসক আরও জানান, এসব বিষয় তাকে মানসিকভাবে পীড়া দিয়েছে। এতে তিনি কষ্টও পেয়েছেন।
আরও কয়েকজন চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এমন কর্মকাণ্ডে ইরানের কয়েকটি নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। এর মধ্যে ইরানের আধাসামরিক বাহিনী বাসিজও রয়েছে।বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলেও দাবি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর। তবে ইরান স্বীকার করেছে, নিহতের সংখ্যা ২০০। এদের মধ্যে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও আছেন।