সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন

পঞ্চগড় জেলা পুলিশের দুই সদস্যের রামরাজত্ব

প্রতিনিধির / ১৮ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

দীর্ঘ ২৪ বছর ও ৩৩ বছর ধরে একই পদে চাকরি করছেন পঞ্চগড় জেলা পুলিশের এক সাব ইন্সপেক্টর ও সুবেদার মো. মিজানুর রহমান ও মোসলেম উদ্দিন। পঞ্চগড় পুলিশ লাইনের আর ও ১ মিজানুর রহমান একই সঙ্গে রেশন ভাণ্ডারেরও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং পোশাক ভাণ্ডারের দায়িত্বে থাকা মোসলেম উদ্দিন এই দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়মসহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ সময় ধরে একই পদে বহাল থেকে অনিয়ম দুর্নীতি করে তারা বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। জেলা শহরে একাধিক জায়গা জমি, সুরম্য বাড়িসহ নিজ জেলায় অঢেল সম্পদের মালিক এই দুই পুলিশ সদস্যের প্রভাব এবং দাপটে সংশ্লিষ্ট বিভাগে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

মো. মিজানুর রহমান একটানা ২৪ বছর ধরে পঞ্চগড় পুলিশ লাইনে আর ও ১ হিসেবে কর্মরত। একই ব্যক্তি হয়ে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের রেশন ভাণ্ডারেরও। পাশাপাশি পুলিশ লাইনের ডাইনিং মেসও তার নিয়ন্ত্রণে। জেলা পুলিশের এই শক্তিশালী সাব ইন্সপেক্টর আর ও ১ এর দায়িত্বে থাকার সুবাদে জেলা পুলিশের কনস্টবলসহ সাব ইন্সপেক্টরদের বদলি, আভ্যন্তরীণ আর্থিক খাত পরিচালনাসহ কনস্টেবল রিক্রুটিং এ ঘুষ বাণিজ্য, রেশন ভাণ্ডারের সকল চুরি-চামরীর কারিশমায় অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

তিনি পুলিশ লাইন সংলগ্ন মহা-সড়কের সঙ্গে ক্রয় করেছেন ৩২ শতাংশ জমি। যার মূল্য বর্তমান বাজারে ১ কোটি টাকার উপরে। বিভিন্ন স্থানে নিয়েছেন দোকান বরাদ্দ, রংপুর বিভাগীয় শহরসহ নিজ জেলা কুড়িগ্রামের ওলিপুরে জায়গা জমি করেছেন অঢেল। বিগত সময়ে এই কর্মকর্তার অধীনে ৩০টিরও বেশি পুলিশ রিক্রুটিং হয়েছে। তৎকালীন পুলিশ সুপারদের চরম আস্থাভাজন হবার কারণে রিক্রুটিং থেকেই তিনি হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে রিক্রুটিং সিস্টেমে স্বচ্ছতা আসায় তিনি বদলে ফেলেছেন তার কৌশল।

কৌশলে মাঠ পর্যায়ের সকল মাপযোগসহ অন্যান্য ইভেন্টে প্রার্থীদের পার করিয়ে দিয়ে অবৈধ সুযোগ নিচ্ছেন তিনি। এই কাজে তার অনুগত কিছু পুলিশ সদস্য রয়েছে। জেলায় কর্মরত একাধিক কনস্টেবল এবং সাব ইন্সপেক্টর ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই কর্মক্ষেত্রে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে মাসিক মাসোহারা নিয়ে থাকেন তিনি। অন্যথায় অন্যত্র বদলির সুপারিশ পেশ করেন পুলিশ সুপারের কাছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর যেমন ভালো থানা, ট্রাফিক, ইমিগ্রেশন, কোর্ট এসব জায়গায় বদলি হতে বড় অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে রিক্রুটিং এ অর্থ গ্রহণসহ নানা দুর্নীতির বিষয়ে বিভাগীয় অভিযোগে হলে ২০২০ সালে তাকে বরিশাল রেঞ্জে বদলি করা হয়। ২ বছরের মাথায় তদবির করে পুনরায় চলে আসেন পঞ্চগড়ের সেই একই কর্মক্ষেত্রে। শুরু করেন আবার সেই অনিয়মের রাজত্ব।

এ বিষয়ে মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অত্যন্ত সাদামাঠাভাবে তিনি জীবন যাপন করেন, তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। তবে তার বিরুদ্ধে নিউজ না করার জন্যে এই প্রতিবেদকে অনুরোধ করে বলেন সামনে তার প্রমোশনের বিষয় রয়েছে, পত্রিকায় এই মুহূর্তে কোনো নিউজ প্রকাশ হলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সুবেদার মোসলেম উদ্দিন। ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি দায়িত্বে আছেন পুলিশের পোশাক ভাণ্ডারের। আর ও ১ এর অত্যন্ত আস্থাভাজন তিনি। পুলিশ রিক্রুটিং এর সময় মাঠে প্রার্থীদের মাপযোগ, হাই জাম্প, লং জ্যাম্প, ৮০০ থেকে ১৬০০ মিটার দৌড়ে মনোনীত প্রার্থীদের কৌশলে পার করে দেয়া তার কাজ। বিগত সময়ে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার সময় নকল সরবরাহের কাজ করতেন তিনি। আর ও মিজানের এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন তার দপ্তরের আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পুলিশের পোষকসহ বিভিন্ন উপকরণ ক্রয়ের বরাদ্দ হয়ে থাকে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর। অতিরিক্ত বরাদ্দ দেখিয়ে দামি মালামাল উত্তোলন করে ঢাকায় বিক্রি করে সেই অর্থ আত্মসাত করে আসছেন তিনি দীর্ঘ সময় জুড়ে।

একজন সুবেদার হয়ে মাসিক বেতন ছাড়া তার আয়ের আর কোনো উৎস নেই। আর ও ১ মিজানের সহায়তায় তিনি এখন কোটি টাকার মালিক। পুলিশ লাইনের পাশে মহাসড়কের ধারে তিনি বানিয়েছেন সুরম্য বাড়ি। নিজ জেলায় স্বনামে আত্মীয় স্বজন এবং পরিবারের নামে কিনেছেন একাধিক জায়গা জমি। পুলিশ লাইনের এই দুই সদস্যের অবৈধ রাজত্বে পুলিশ বিভাগে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ সদস্য ভয়ে এসবের প্রতিবাদ করতে পারছে না। তারা দাবি করেছেন উল্লেখিত ব্যক্তিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব সমূহ তদন্ত করলেই তাদের দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ