বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশি নাগরিকরা। পর্যটন ভিসায় দেশে এসে প্রায় ৫ লাখ বিদেশি কাজ করছেন তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি খাতে। বছরে দেশের বাইরে যাচ্ছে কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলার। এদের কাছ থেকে আয়কর আদায় করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বড় হচ্ছে। বাড়ছে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড। তবে সমানতালে বাড়ছে না দক্ষ জনবল। আর এই দুর্বলতারই সুযোগ নিচ্ছেন বিদেশি নাগরিকরা। গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র তথ্য বলছে, অন্তত ৫ লাখ বিদেশি কাজ করছেন বাংলাদেশে। বছরে বাইরে যাচ্ছে কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলার।
দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে বেশিরভাগই তৈরি পোশাক শিল্পে নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠানের মধ্য ও উচ্চ পদে কাজ করছেন তারা। নিচ্ছেন উচ্চ-বেতন ও ভাতা। করোনা পূর্ববর্তি টিআইবি’র এক গবেষণা জানায়, বিদেশি নাগরিকদের বেশিরভাগের কাজের অনুমতি না থাকায় বিপুল রাজস্ব-বঞ্চিত সরকার।
গবেষণা বলছে, দেশে কাজ করা বিদেশি নাগরিকদের ৪১ শতাংশ ভারতীয়। এছাড়া ১৬ শতাংশ চীন, ৫ শতাংশ জাপান, ৪ শতাংশ শ্রীলংকা ও ৪ শতাংশ দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। বাকি ৩০ ভাগ অন্যান্য দেশের।
তবে দেশীয় জনবল দিয়েও অনেক কারখানা ভালো চলছে। এমনটাই জানালেন পোশাক খাতের এই উদ্যোক্তা।
মাইক্রো ফাইবার গ্রুপের ডাইরেক্টর ফাইন্যান্স এম কে জামান বলেন, “আমাদের নিজস্ব জনশক্তি যে আউটকাম দিচ্ছে, তাদের যে ডুয়েল কমিউনিকেশন এটা বিদেশিদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাদেরকে অনেক টাকা বেতন দিচ্ছি কিন্তু আউটপুট সেরকম পাচ্ছি না। দশ হাজার ডলার যদি বিদেশি এক্সপার্টকে বেতন দেই তার সাথে আরও আনুসাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়। কিন্তু এই দশ হাজার ডলারের জায়গায় যদি দশজন দেশীয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারকে সুযোগ দেই তাহলে বিদেশিদের চেয়ে বেশি আউটকাম পাই বলে পরীক্ষা করে দেখা গেছে।”
দেশে দক্ষ জনবল তৈরি না হলে বিদেশিদের ওপর নির্ভরতা কমানো কঠিন। ঠেকানো যাবে না বহিঃমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ।
সিপিডি গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “আগে আমাদের তৈরি পোশাক খাতের সেফটির জন্য আলাদা লোকবল অথা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন্সের জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্ট- এগুলো কিন্তু সেভাবে ভাবা হতো না। এখন এগুলো একটি কারখানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। ৪০ শতাংশ বড় কারখানায় বিদেশিরা চাকরি করেন এবং সেখানে গড়ে ৪ জনের মধ্যে একজন বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।”
ডায়িং, ওয়াশিং ও ম্যানমেইড ফাইবার পণ্য উৎপাদনে বিদেশি কর্মীদের সহায়তা নিতে হচ্ছে বলে জানান বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, “বাংলাদেশি ফ্যাক্টরি বিদেশিরা চালায় এরকম হাতেধরা ২-৫টা থাকতে পারে। কেউ চায় না বিদেশি এনে বেতন-ভাতা অনেক বেড়ে যাক। একটা ফ্যাক্টরি সাসটেন করতে এটা অবশ্য একটা অন্তরায়।”
বিদেশি নাগরিকদের ওপর নির্ভরতা কমাতে শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।