বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষা বাতিল ও সার্বিক তদন্তে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (লালবাগ) বিভাগ।তদন্তে ও গ্রেফতার ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্পষ্ট হয়েছে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কক্ষ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। আরও অনেক ব্ল্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়েছে। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের এমডির কক্ষ থেকে প্রশ্নফাঁস করেছেন এমডির অফিস সহকারী জাহিদ হোসেন। নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে কমিটি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। এখানে অনেক লোকের চাকরি হওয়ার কথা। তারা দায় এড়াতে পারেন না। এ ঘটনায় যাদের দায় রয়েছে, যারা প্রশ্নফাঁস করেছেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের কাউকে ফোনে কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির ঘটনায় ডিবি লালবাগ বিমানবন্দর, কাউলা থেকে আওলাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, এনামুল হক, হারুন-অর-রশিদ ও মাহফুজুল আলম নামে বিমান বাংলাদেশের পাঁচ কর্মচারীকে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্রের সফট কপি, টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্প, মোবাইল নম্বর, ডায়েরি ও পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়। এরপর গ্রেফতার করা হয় আরও ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।
তারা হলেন-মো. মাসুদ, জাহিদ হাসান, সমাজু ওরফে সোবহান, জাবেদ হোসেন ও জাকির হোসেন। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩২টি চেক, ১৭টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১৪টি মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল, ৩টি ডায়েরি, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের হার্ডকপি ও সফটকপি এবং নিয়োগ প্রার্থীদের ৫৪টি প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়।হারুন বলেন, পরীক্ষা কমিটির মূল জিএম অ্যাডমিনের কক্ষে প্রশ্নপত্র তৈরি হয়। সেখান থেকে একজন প্রশ্নপত্রের ছবি তোলেন। ২০ অক্টোবর বিমানের লোগো মুছে ফেলে ৮০টি প্রশ্ন টিক চিহ্ন দিয়ে আরও দুজনের কাছে সরবরাহ করেন। ওই দুজন মোটরসাইকেলে চলে যান। আবার ১৯ অক্টোবর সামারাইজ প্রশ্নের ফটোকপি করতে এমডির অফিস সহকারী জাহিদ হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি প্রশ্নপত্র ফটোকপি করার সময় স্মার্টফোনে ছবি তুলে সোবহানের কাছে পাঠিয়ে দেন। সোবহান আরও কয়েকজনের কাছে সরবরাহ করেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র তৈরি, প্রিন্টিং ও পরীক্ষার আয়োজনের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেন। যাবতীয় কার্যক্রম তারাই করেন। তারা দেখভালের দায়িত্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এ সুযোগে এমডির অফিস সহকারী জাহিদ ছবি তুলে তা ফাঁস করেন। আদালতে গ্রেফতাররা বলেছেন, এর আগে বিভিন্ন সময় একইভাবে তারা বিমান বাংলাদেশের নিয়োগসংক্রান্ত অপকর্ম করেছেন, চুরি করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন।গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ, জবানবন্দি ও যাবতীয় ডিজিটাল তথ্য-উপাত্তে এটা স্পষ্ট হয়েছে, তারা অর্থের বিনিময়ে আগেও অপকর্ম করেছেন। ২১ অক্টোবরও তারা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছে প্রশ্নসহ উত্তরপত্র বিতরণ করেছেন। তারা আরও অনেকের নাম বলেছেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে জড়িত কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব ছিল সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। এ ঘটনায় গ্রেফতাররা নিয়োগ কমিটির সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি বলেছেন। তারা এ দায় এড়াতে পারেন না। আমরা গ্রেফতারদের জবানবন্দি বিশ্লেষণ করছি। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছি। সবকিছু মিলে যাদের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের দায় এসেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ১২টি পদে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ধার্য ছিল ২১ অক্টোবর। কিন্তু পরীক্ষার আগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্রের ফাঁসের অভিযোগ পেয়ে অভিযানে নামে ডিবি লালবাগ। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় ২৬ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।