মানবদেহের বিপাকপ্রক্রিয়ায় ইউরিক এসিড তৈরি হয়। এটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে মাত্রার অধিক ইউরিক এসিড শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এক ধরনের বাতের ব্যথার সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।এই বাতের ব্যথাটি গাউট হিসেবে পরিচিত। গাউট একটি প্রদাহজনিত বাত, যা সচরাচর একটি অস্থিসন্ধিকেই প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত করে। পুরুষদের মধ্যে গাউট রোগটি বেশি দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। স্থূলকায় হলেও ঝুঁকি বেশি থাকে।
কারণ
কারো শরীরে ইউরিক এসিড বাড়লেই তার বাতরোগটি হবে তা নয়। বংশগতির সঙ্গে বর্ধিত ইউরিক এসিডের মিলিত প্রভাবই এই বাতরোগ প্রকাশ করে। বংশগতির যোগ না থাকলে বাড়তি ইউরিক এসিড কোনো সমস্যা না-ও করতে পারে। ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কেলাস বা স্ফটিকের ছোট ছোট দানার রূপ নিয়ে অস্থিসন্ধির ভেতরে ও আশপাশে জমা হয় ইউরিক এসিড। এর ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
শরীরে ইউরিক এসিড তিনভাবে জমা হয়। খাবার গ্রহণের মাধ্যমেও ইউরিক এসিড বাড়তে পারে। লাল মাংস, মগজ, কলিজা, বৃক্ক, নাড়িভুঁড়ি, সামুদ্রিক খাদ্য, তেলযুক্ত মাছ—এ সব কিছুই শরীরে ইউরিক এসিড বাড়ায়। আবার শরীর বিপাকপ্রক্রিয়ায় অধিক পরিমাণ ইউরিক এসিড তৈরি করেও রক্তে ইউরিক এসিড বাড়িয়ে দিতে পারে। বৃক্ক ও অন্ত্রের মাধ্যমে ইউরিক এসিড নিষ্কাশন যথাযথ না হলেও এটি শরীরে ইউরিক এসিড বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দেয়। বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে শেষের কারণটিই খাটে।
লক্ষণ
♦ অত্যন্ত তীব্র ব্যথা অনুভব হয়
♦ অস্থিসন্ধি ও আশপাশের ত্বক লালাভ হয়ে ওঠে
♦ আক্রান্ত স্থানের পুরোটাই ফুলে যায়
পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে এটি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা রয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার ক্ষেত্রে কিডনিতে ইউরিক এসিডের পাথরজাতীয় বস্তু জমা হতে পারে, যা কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে।
করণীয়
শরীরে বাড়তি ইউরিক এসিড পাওয়া গেলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয় সাপেক্ষে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি গাউট রোগে জন্যও প্রতিরোধী ওষুধ রয়েছে। এ জন্য অবশ্যই বাতের ব্যথা বিশেষজ্ঞ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন আবশ্যক। ইউরিক এসিড বাড়িয়ে দিতে পারে এমন ওষুধ সেবন বন্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং যেসব খাবার (যেমন লাল মাংস, সামুদ্রিক খাদ্য ইত্যাদি) ইউরিক এসিড বাড়ায় সেসব খাবার কম পরিমাণে খেতে হবে।