ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার সৈয়দপুর থেকে উদ্ধারের পর শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে রহিমা বেগমকে খুলনায় আনা হয়েছে। তাকে রাখা হয়েছে দৌলতপুর থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। এর আগে এদিন রাত পৌনে ১১টার দিকে বোয়ালমারী থানার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় রহিমাকে। এদিকে উদ্ধারের পর থেকেই কোনো কথা বলছেন না রহিমা বেগম। পুলিশ বলছে, ‘একটু অপেক্ষা করুণ। সব রহস্য বেরিয়ে আসবে।’
গত ২৭ আগস্ট রাতে মহেশ্বরপাশার উত্তর বনিকপাড়ার নিজ বাড়ির নলকূপে পানি আনাতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন রহিমা। এই ঘটনায় তার মেয়ে আদুরী পরের দিন দৌলতপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।সাম্প্রতিক সময়ে রহিমা বেগম অপহরণ মামলা একটি আলোচিত ঘটনায় রূপ নেয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, গণমাধ্যম তথ্যানুসন্ধানে সত্য উদঘাটনে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। মরিয়ম ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে। প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রাখে কেএমপি পুলিশ। অবশেষে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রহিমাকে সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করে খুলনায় নিয়ে আসে।
এদিকে বোয়ালমারী থেকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ দলটি শনিবার গভীর রাতে খুলনায় পৌঁছানোর পর তাকে নিয়ে আসা হয় দৌলতপুর থানায়। গণমাধ্যমকর্মীরা ছুটে আসেন। এসময়ে দিব্যি রহিমা সুস্থ সবল মানুষের মতো গাড়ি থেকে নেমে হাটতে হাটতে থানায় প্রবেশ করেন। তার চোখে মুখে কোনো ভয়ের ছাপ পরিলক্ষিত হয়নি। একেবারে ঠান্ডা মাথার মানুষের মতো আচরণ করেছেন। আর সচেতন ভাবেই পুলিশ বা গণমাধ্যম কর্মীদের সকল প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। কোনো কথারই উত্তর দেননি তিনি। বারবার রহিমার কাছে ঘটনাটি জানতে চেয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। জবাব মেলেনি। ইশারায় মাঝে মধ্যে কিছু কথায় হ্যাঁ, না সায় দিয়েছেন।
২৭ আগস্ট খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা বনিকপাড়ার বাসিন্দা রহিমা নিখোঁজের পর তার মেয়ে আদুরী বাদি হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন পরদিন ২৮ আগস্ট। ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা রহিমাকে উদ্ধারের দাবিতে একের পর এক কর্মসূচিত পালন করেন। এরই মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা এলাকায় উদ্ধার হওয়া একটি পচাগলা লাশ রহিমার বলেও দাবি করেন তার মেয়ে রমিয়ম মান্নান। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটে শনিবার রাতে বোয়ালমারি থেকে অক্ষত অবস্থায় মরিয়মকে উদ্ধারের পর।
এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি নর্থ মোল্যা জাহাঙ্গীর হোসেন রাতে এক প্রেসব্রিফিং এ জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রহিমা বেগমকে বোয়ালমারী সৈয়দপুর গ্রামের জনৈক কুদ্দুসের বাড়ি থেকে গল্পরত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। লেডি পুলিশসহ এডিসি নর্থ মো. আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল এই অভিযান পরিচালনা করেন। উদ্ধারের ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত রহিমা কুদ্দুসের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। কিন্তু পুলিশ হেফাজতে আসার পর আর কোনো কথারই উত্তর দিচ্ছেন না তিনি।
কুদ্দুসের বাড়ির সদস্যদের বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর রহিমা দুই প্যাকেট বিস্কুট আর নিজের জামাকাপড় নিয়ে সাবেক ভাড়াটিয়া কুদ্দুসের বাড়ি যান। কুদ্দুস সোনালী জুট মিলে চাকরি করার সময় রহিমার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। প্রেসব্রিফিং এ আরো জানানো হয়, রহিমা অপহরণ মামলাটি আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করছে। একটু অপেক্ষা করুণ, প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে। দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ঘটনার মূল রহস্য পিবিআই তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।