লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এবারের দাখিল, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের বড় অংশকেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা। কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে নানা কৌশল অবলম্বন করে তারা মেয়েদের অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। করোনা ও বন্যার কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর সারা দেশের মত লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এসএসসি ও দাখিলসহ সমমানের পরীক্ষা শুরু করেছেন সরকার। এখন পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী ঢাকা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে।কোন পরীক্ষার্থী বহিস্কারনাই।
রোববার উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানাযায়, চলমান এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম ফিলাপ করার পরও শেষ পর্যন্ত ৫২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না, যার মধ্যে ২০ জনই ছাত্রী রয়েছে।
বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মকর্তা বলছেন, যেসব ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না; তাদের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। এদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। যদিও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বয়স বিয়ের উপযোগী নয়। আর সে কারণেই এসব বিয়ের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের চোখ এড়াতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল বলে জানান স্থানীয় শিক্ষকরা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৪টি কেন্দ্র) থেকে ২৫০৪ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় ২১টি মাদ্রাসা থেকে (দুটি কেন্দ্র) ৮৭৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফর্ম পূরণ করেছিল। আবার পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন ৫-৬ মাসের শিশু নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসছে। হায়দরগঞ্জ টিআরএম কামিল মাদরাসার এক পরীক্ষার্থী ঢাকা সাভার শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ঢাকা মিল্লাত মাদরাসা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন। এলএম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভোকেশনাল শাখা থেকে ১৮৫ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন। মোট ৩৫৬৮ জনের মধ্যে ২০১৮ জন ছাত্রী ফরম ফিল আপ করে। তার মধ্যে ২০ জনেরই বিয়ে হয়েছে।
বাল্যবিয়ের শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী উপজেলার চরআবাবিল গ্রামের মেহরুন্নেছা আক্তার জানায়, দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষার এক মাস আগে আমার একটি সন্তান হয়েছে। প্রথম পরীক্ষা দেওয়ার পর আমার বাচ্চা অসুস্থ থাকার কারণে আমি পরবর্তীতে আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। আমার পড়ালেখা করার ইচ্ছা ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনজন দাশ জানান, অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার কারণ আমরা অনুসন্ধান করব। এরা সবাই বিয়ের কারণেই অনুপস্থিত কিনা এগুলো আমরা বিস্তারিত এখনো জানি না। বাল্যবিয়ের খবর পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এটি অবশ্য সত্য যে, অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপন স্থানে গিয়ে অভিনব কৌশলে কেউ কেউ বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন।