র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, তাদের মূল টার্গেট নিউমার্কেট এবং পল্টন এলাকার ব্যাংকের কাস্টমার। যখন কোনো এলাকায় ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে তখন ডাকাত দলের সর্দার কাওসার সবাইকে নিয়ে বস্তিতে তাদের ভাড়া করা বাসায় সমবেত হয়ে সেখান থেকে ডাকাতির স্থান রেকি করেন। ব্যাংকের গ্রাহক টাকা উত্তোলন করে ফেরার সময় ডাকাত দলের গোয়েন্দা সদস্যরা পিছু নিয়ে নিরাপদ স্থানে আটকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নেয়। এ পর্যন্ত চক্রটি ঢাকা কুমিল্লা মহাসড়ক এবং মাওয়া হাইওয়ে রোডে ১৫-২০ টির বেশি ডাকাতি করেছে।
ডাকাত দলের নাম কাউসার বাহিনী। তারা র্যাব-ডিবির ভুয়া জ্যাকেট পরে নামতেন রাস্তায়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসের গতিরোধ করতেন। এরপর শুরু ডাকাতি। গত তিন বছরে চক্রটি ঢাকা কুমিল্লা মহাসড়ক ও মাওয়া হাইওয়ে রোডে ১৫ থেকে ২০ টির বেশি ডাকাতি করেছে।এই ডাকাত দলের ছয় সদস্যের মধ্যে ৪ জনকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতাররা হলেন ডাকাত দলের সর্দার কাউসার আলী (৩০), সহযোগী আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৪০), আলী আকবর (২৪), মো. ইমামুল হক (২৭)। বাকি দুজন এখনো পলাতক।
বুধবার বিকালে রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন এলাকায় জাঙ্গাল গ্রামে সুন্দরবন ফিলিং স্টেশনের পাশ থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালীন তাদের গ্রেফতার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে দুইটি ডিবি জ্যাকেট, একটি র্যাব জ্যাকেট, দুইটি ওয়াকিটকি সেট, একটি হ্যান্ডকাপ, একটি ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, একটি এনআইডি কার্ড, দুইটি মানিব্যাগ, একটি লেজার লাইট, একটি ব্যাগ, ছয়টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, ডাকাত দলের সর্দার কাউসার আলী নিজেকে ডিবি পুলিশের এ এস পি পদবী, মো. মামুন ডিবি পুলিশের ওসি, মো. আলী আকবর র্যাবের এসআই এবং মো. এনামুল ডিবি পুলিশের কনস্টেবল পরিচয় দিয়ে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে ঘুরে বেড়ান।জন-সমাগমহীন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সুযোগ বুঝে ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় চলাচলকৃত যাত্রীবাহী বাসকে লেজার লাইটের মাধ্যমে গতিরোধ করে ভুয়া ডিবি ও র্যাব পরিচয় দিয়ে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল এবং অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রী লুটপাট করে।
কাউসার বাহিনীর কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, ডাকাতির দিনে তারা একাধিক ব্যাংকে নজরদারি রাখে। মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলন করে কোনো গ্রাহক বের হলে চক্রের রেকি করা সদস্য পিছু নেন। যাত্রীবাহী বাসে উঠলে তারাও একযোগে ওঠেন।
এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা অন্য সদস্যদের বিভিন্নভাবে পরিবহনের গতিপথ এবং লোকেশন বলে দেন। তারা নিয়মিত আপডেট দিতে থাকেন। নিরাপদ স্থানে লেজার লাইটে বাস আটকে দেন তারা। তাদের শরীরে থাকে ডিবি ও র্যাবের ভুয়া জ্যাকেট। অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী অথবা হত্যা মামলার আসামি বলে গাড়ি থেকে নামিয়ে তাদের মাইক্রোতে উঠিয়ে নেন। এরপর টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে ভিকটিমকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান।