দেশে সব ধরনের জ্বালানি বাণিজ্যের জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে ৫০০ কিলোওয়াটের ঊর্ধ্বে সব ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু সিএনজি স্টেশনগুলোকে বারবার বলার পরও তারা লাইসেন্স নিচ্ছিলো না। তাদের অনেকবার চিঠি দিয়েও বিইআরসি কোনও সাড়া পায়নি। শেষ পর্যন্ত জ্বালানি বিভাগ এবং পেট্রোবাংলাকে এ বিষয়ে কঠোর হতে বলে বিইআরসি।
লাইসেন্স ছাড়া চলতে পারবে না সিএনজি স্টেশন। জবাবহিদিতার আওতায় আনতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত সাড়া দিয়েছেন স্টেশন মালিকরা। যদিও মালিকদের সংগঠন বলছে, বিপুল অঙ্কের লাইসেন্স ফি তাদের জন্য চাপ হয়ে যায়।
তালিকা অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া সিএনজি স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করে তিতাস গ্যাস কোম্পানি– এমন খবর প্রচারের পরপর সিএনজি স্টেশন মালিকরা লাইসেন্স নেওয়ার জন্য বিইআরসিতে যোগাযোগ শুরু করেন। গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত এক হিসাবে বিইআরসি বলছে, তারা লাইসেন্সবিহীন ৯৯টি সিএনজি স্টেশনের তালিকা করেছিল। এরমধ্যে ৩৫টির লাইসেন্স দিয়েছে কমিশন। আর লাইসন্সের জন্য ৪৩টিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও ৮টি। এছাড়া নতুন আবেদন পাওয়া গেছে ২১টির মতো।
অন্যদিকে নবায়নের ক্ষেত্রে ২২টি লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে। সমপরিমাণ সিএনজি স্টেশন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ৪৪টি লাইসেন্স নবায়নের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে।
বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এ খাতে যে অব্যবস্থাপনা রয়েছে সেগুলোকে শেষ করতে চাইছি। দেশে ব্যবসা করে, কিন্তু তার কোনও লাইসেন্স নেই। এটা কেমন কথা! তিনি বলেন, সাধারণ পান দোকানদারকেও লাইসেন্স করতে হয়। কিন্তু এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার লাইসেন্স নেই জ্বালানির বড় ব্যবসায়ীদের, এটা ভাবা যায়! শুরুতে তারা নানা টালবাহানা করলেও এখন বুঝেছে এটা করাটা জরুরি। তিনি জানান, বার বার চিঠি দিয়ে তাগাদা দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হলো।
বিইআরসি সূত্র বলছে, সব কিছুই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি। কোনও প্রতিষ্ঠান যদি লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করে তাহলে তাকে কোনও দিনই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।ব্যবসায়ী কি সুবিধা পাবেন তার চাইতে বড় বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ। এত দিন যারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলেন তারা এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসলেন। সেটিই বিইআরসির বড় সাফল্য।
জানতে চাইলে সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সরকারের আইন মানবো না বা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবো না বিষয়টি মোটেই এমন কিছু নয়। লাইন কাটা তো কোনও সমাধান না। আমরা বলেছিলাম, একটু ধীরে চলতে।
যারা লাইসেন্স নেননি তাদের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য আমরা একটা সার্কুলার জারি করেছিলাম। তারা আবেদনও করতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, এই লাইসেন্স না নেওয়ার পেছনে একটা ঘটনা আছে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স ফি ছিল ১ লাখ টাকা।আমাদের এটি নিয়ে বিরোধিতা ছিল। এরপর তা কমিয়ে নতুন লাইসেন্স ৫০ হাজার, নবায়ন ২০ হাজার করা হয়েছে। এরপর লাইসেন্স নেওয়া শুরু হয়। এরমধ্যে কিছু বাকি পড়ে যায়। এখন তাদের লাইন কাটার পর তারাও লাইসেন্স নিয়ে নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সিএনজি সংশ্লিষ্ট আরেকজন জানান, এখন গ্যাসের চাপ কম, ছয় ঘণ্টা বন্ধ। আরও দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুতের জন্য বন্ধ থাকে। এর মধ্যে বছরে এত টাকা লাইসেন্স ফি পরিশোধ করা আমাদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে যায়। এটি আরও সহনীয় করার দাবি জানান তিনি।