সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

শিক্ষার্থী হত্যায় শিক্ষক রনির স্বীকারোক্তি

প্রতিনিধির / ২২২ বার
আপডেট : শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
শিক্ষার্থী হত্যায় শিক্ষক রনির স্বীকারোক্তি
শিক্ষার্থী হত্যায় শিক্ষক রনির স্বীকারোক্তি

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এর বিচারক মো. এমদাদ আসামি আবদুর রহিম রনি’র স্বীকারোক্তি রেকর্ড করেন। সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। নোয়াখালীতে স্কুলছাত্রী (১৪) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মূল অভিযুক্ত সাবেক কোচিং শিক্ষক আব্দুর রহমান রনি (২৫)। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্কুলছাত্রীকে হত্যা করেন রনি। হত্যাকাণ্ড ক্রাইম পেট্রোল দেখে শিখেছেন। হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতেই ঘরের আলমারিতে থাকা মালামাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন তিনি।

আসামির স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার দিন আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলছাত্রীর বাসার তৃতীয় তলায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছিল রনি। স্কুলছাত্রীর বাসার দরজার সামনে গিয়ে নক দিলে দরজা খুলে দেয় ওই ছাত্রী। কোচিং শিক্ষক থাকায় তাকে ভিতরে বসতে বলেন। কিছুক্ষণ তার সঙ্গে গল্প করার পর স্কুলছাত্রী রান্না ঘরে গেলে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পাশের কক্ষে এনে ধর্ষণের চেষ্টা করেন রনি। এ সময় তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় স্কুলছাত্রীর এবং রনির গলা ও ঘাড়ে নখ দিয়ে আঁচড়ে দেয়। বিষয়টি সবাইকে বলে দেয়ারও হুমকি দেয় স্কুলছাত্রী।

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে রনি স্কুলছাত্রী পরনের ওড়না দিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলেন এবং মুখ চেপে ধরেন। এতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে স্কুলছাত্রী। পরে বালিশ দিয়ে চাপা দিলে স্কুলছাত্রী নিস্তেজ হয়ে যায়। এসব ঘটনার সময় স্কুলছাত্রীর চিৎকারের শব্দ যেন বাইরে না আসে সেজন্য টিভিতে ফুল ভলিউম, পানির ট্যাব ও ফ্যানগুলো চালিয়ে রাখে রনি।

এসপি আরও বলেন, পুরো ঘটনাটি টিভিতে ক্রাইম পেট্রোল দেখে হত্যার বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য রান্না ঘর থেকে একটি ছোরা এনে প্রথমে স্কুলছাত্রীর দুই হাতের রগ ও পরে গলা কেটে দেন। ঘটনাটি ডাকাতি প্রমাণ করার জন্য ঘরের আলমারিসহ বিভিন্নস্থানে থাকা জিনিসপত্র এলোমেলো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বাইরে দিয়ে তালা দিয়ে চলে যান রনি। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনা তিনি একা ঘটিয়েছেন বলেও স্বীকার করেছে। তারপরও এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। আপাতত এ ঘটনায় তার মায়ের দায়ের করা মামলায় আবদুর রহিম রনিকে আসামি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নিহতের মা রাজিয়া সুলতানা, বোন ও স্বজনরা। এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে সদ্য পদন্নোতি পাওয়া পুলিশ সুপার দ্বীপক জ্যোতি খীষা, সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলামসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আবদুর রহিম রনির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। সন্ধ্যায় আমলি আদালত-১ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এমদাদ শুনানি শেষে আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর শেষে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়।

এদিকে, স্কুলছাত্রী হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও শোক র‌্যালি করেছে তার সহপাঠীরা। র‌্যালিতে নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী জিলা স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা অংশগ্রহণ করেন।শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নোয়াখালী প্রেসক্লাব, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও সুধারাম মডেল থানার সামনে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তারা। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারয়ণপুর এলাকার জাহান মঞ্জিলের একটি কক্ষ থেকে অদিতার হাত-পা ও গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ