বড়দের মতো শিশুদেরও কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। জন্মের পর থেকেই শিশুরা এ সমস্যায় পড়তে পারে। তবে জন্মের ছয় মাস পর এ সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। কারণ এ সময়টায় অনেক বাচ্চাই পর্যাপ্ত বুকের দুধ পায় না আর ফর্মুলা ফিডিংয়ের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হয় এবং তা বাড়তে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কী?
সপ্তাহে তিনবারের বেশি পায়খানা না হওয়া বা পায়খানা করার সময় শিশু যদি ব্যথা পায় ও কষ্ট অনুভব করে, তাহলে বাচ্চাটি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে বলে ধরে নেওয়া হয়। অনেক সময় বাচ্চারা পায়খানা করার সময় কান্নাকাটি করে এবং ভয় পায়। কারণ এ সময় মল শক্ত হয়, কালো হয়, এমনকি রক্তযুক্ত থাকে। যেহেতু পেট পরিষ্কার হয় না, ফলে গ্যাসে বাচ্চার পেট ফুলে যায় এবং ব্যথার সৃষ্টি হয়।
মা-বাবা হিসেবে কিভাবে বুঝবেন?
মনে রাখবেন, আপনার শিশু তার সমস্যার কথা আপনাকে বলতে পারবে না। তাই মা-বাবা হিসেবে খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চা প্রতিদিন পায়খানা করছে কি না, পায়খানার রং কালো কি না, মল শক্ত কি না, সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করছে কি না। এ লক্ষণগুলো মিলে গেলে অবশ্যই সচেতন হয়ে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিরোধে করণীয়
♦ জন্মের পর পূর্ণ ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মায়ের বুকের দুধ যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে সে জন্য একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের পরামর্শে মায়ের খাদ্যতালিকা ঠিক করে নেওয়া উচিত।
♦ ছয় মাস পর বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চার পরিপূরক খাবারে পর্যাপ্ত সলিউবল ফাইবার (যে ফাইবার পানিতে দ্রবীভূত হয়) ও পানি যেন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
♦ এক বছর বয়সের পর থেকে বাচ্চাকে সকালে খালি পেটে পানি দিতে হবে ও নাশতার আগে অবশ্যই পটি ট্রেনিং করাতে হবে।
♦ বাচ্চার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পানি আছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
♦ বাচ্চাদের অবশ্যই প্রতিদিন এক ঘণ্টা খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পাশাপাশি ঘরোয়া ব্যায়াম ও নিজের কাজ গোছানোর মতো বিষয়গুলোতেও অভ্যাস করানো জরুরি। এতে কায়িক পরিশ্রম হবে, হজমশক্তি বাড়বে, পেট পরিষ্কার থাকবে।
কী কী খাবার দেব?
বুকের দুধ, সাগু, লাল বা বাদামি চালের ভাত, লাল চিঁড়া, ওটস, ছাতু, পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, লালশাক, পালংশাক, কলা, খেজুর ইত্যাদি।
কী কী খাবার বাদ দেব?
যেসব বাচ্চা এরই মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে, তাদের জন্য রুটি ও শক্ত ভাত, পোলাও চালের ভাত, গরুর মাংস, ফর্মুলা মিল্ক বাদ দেওয়া জরুরি।
লেখক : ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট
ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, মালিবাগ, ঢাকা।