রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১২ পূর্বাহ্ন

সফটওয়্যারের সীমাবদ্ধতায় ‘আটকে’ যাচ্ছে পাসপোর্ট

প্রতিনিধির / ১৯৪ বার
আপডেট : বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
সফটওয়্যারের সীমাবদ্ধতায় ‘আটকে’ যাচ্ছে পাসপোর্ট
সফটওয়্যারের সীমাবদ্ধতায় ‘আটকে’ যাচ্ছে পাসপোর্ট

সফটওয়্যারের সীমাবদ্ধতায় ‘আটকে’ যাচ্ছে পাসপোর্ট
সফটওয়্যারের সীমাবদ্ধতা এবং এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির চিত্র উঠে এসেছে পুলিশের একটি বিশেষায়িত শাখার প্রতিবেদনে।

ফরমে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার অংশে সীমিত ক্যারেক্টার থাকায় আবেদনকারী পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা লিখতে পারেন না।

ঠিকানা খুঁজে না পেয়ে অনেক সময় পুলিশ আবেদনকারী সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিচ্ছে

 

অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদনের ঠিকানা লেখার জায়গায় ৯৬ ক্যারেক্টারের (অক্ষর, বিরামচিহ্ন ও দুই শব্দের মধে৵র ফাঁকা জায়গাসহ) বেশি ব্যবহারের সুযোগ নেই। এতে অনেকেই সংক্ষিপ্ত আকারে ঠিকানা লিখতে বাধ্য হন।

তবে বিপত্তি বাধে আবেদনকারীর দেওয়া তথ্য যাচাইয়ের সময়। পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পেয়ে পুলিশ অনেক সময়ই ‘নেতিবাচক’ প্রতিবেদন দিচ্ছে। ফলে ওই সব আবেদনকারীর পাসপোর্ট আটকে যাচ্ছে।

সরকারের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সফটওয়্যারের এমন সীমাবদ্ধতা এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির চিত্র উঠে এসেছে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিটের প্রতিবেদনে। সম্প্রতি ওই প্রতিবেদন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

সফটওয়্যারে সীমাবন্ধতার কারণে চিকিৎসাসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে পাসপোর্টের আবেদন করে বিপাকে পড়ছেন অনেকে। নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে অনেকেই জানতে পারছেন, তাঁদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। এতে পুলিশ সম্পর্কে তাঁদের ভুল ধারণা তৈরি হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা

পুলিশের ওই ইউনিটের কর্মকর্তারা বলেন, ২০২১ সালের মার্চে সফটওয়্যার হালনাগাদ করা হয়। এরপর থেকে এ সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জরুরি প্রয়োজনে আবেদন করেও পাসপোর্ট পাচ্ছেন না অনেকে। এ ছাড়া পুলিশ নেতিবাচক প্রতিবেদন দেওয়ায় পাসপোর্টের জন্য জমা দেওয়া ফি ফেরত পান না আবেদনকারীরা। এ ক্ষেত্রে কী করবেন, সে বিষয়ে ইমগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

সফটওয়্যারের সীমাবন্ধতা
পুলিশের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আবেদন ফরমে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার জায়গায় আলাদাভাবে ৯৬টি ক্যারেক্টার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে জেলা, থানা, পোস্ট অফিস ও পোস্ট কোড আগে থেকেই সংযোজন করা আছে।

এতে ৯৬ ক্যারেক্টারের বড় অংশ চলে যায়। আবেদনকারীকে প্রযোজ্য অংশটি ক্লিক করে ঠিকানার বাকি অংশ পূরণ করতে হয়। ফলে আবেদনকারী তাঁর বাড়ির নম্বর, বাড়ির নাম, গলি বা রাস্তার নাম, ওয়ার্ড নম্বর ইত্যাদি পূর্ণাঙ্গভাবে লিখতে পারেন না।

পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সফটওয়্যারে সীমাবন্ধতার কারণে চিকিৎসাসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে পাসপোর্টের আবেদন করে বিপাকে পড়ছেন অনেকে। নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে অনেকেই জানতে পারছেন, তাঁদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। এতে পুলিশ সম্পর্কে তাঁদের ভুল ধারণা তৈরি হয়। অথচ পুলিশ ওই সংক্ষিপ্ত ঠিকানা ধরে আবেদনকারীকে খুঁজে পান না।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আবার কারও আবেদন কোনো কারণে মুলতবি (পেনডিং) থাকলে তা কত দিন ধরে মুলতবি আছে, সফটওয়্যারে তা জানা যায় না। এতে করে মুলতবি থাকা পাসপোর্টের তদন্তে গতি আনা যাচ্ছে না।

 

অর্থ ও সময় অপচয়’
পুলিশের প্রতিবেদনে একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের বন্দর এলাকার আবেদনকারীকে আগে থেকে সংযোজন করা চট্টগ্রাম (জেলা), বন্দর (থানা) ও চট্টগ্রাম মেইন প্রধান পোস্ট অফিস-৪১০০ বেছে নিতে হয়। এসব সংযোজনের পর বাকি থাকে ৩৬ ক্যারেক্টার। এর মধ্যে বাড়ির নম্বর, বাড়ির নাম, গলি বা রাস্তার নাম, কত তলায় থাকেন, এসব তথ্য লেখা যায় না। ফলে আবেদনকারীদের বাধ্য হয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে ঠিকানা লিখতে হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন এমনই একজন ভুক্তভোগী। সম্প্রতি তিনি তাঁর পাঁচ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ ইমান উদ্দিনের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। আবেদনে তিনি ঠিকানা দেন নিমতলা, ডব্লিউ-৩৬, বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর মেইন পোস্ট অফিস-৪১০০, চট্টগ্রাম।

ওই আবেদনের বিষয়ে পুলিশ বলছে, ‘নিমতলা এলাকাটি অনেক বড়। বাড়ির নম্বর, বাড়ির নাম ও গলি নম্বর ছাড়া সেটি খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। ফলে পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পেলে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেওয়ার সুযোগ নেই। আর মোবাইল নম্বর ধরে কারও ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না।’

ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, তিনি পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা লিখতে চেয়েও পারেননি। সফটওয়্যারের সমস্যায় আবেদনকারীকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অর্থ ও সময় অপচয়ের পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাওয়ারও সুযোগ থাকছে না।

ক্যারেক্টারের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে
পুলিশের ওই প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। জেলা, থানা, ডাকঘর ও পোস্ট কোড সংযোজনের পর অন্তত ৭৫টি ক্যারেক্টার লেখার সুযোগ রাখলে এ সমস্যা কমে আসবে। এ ছাড়া বড় নামের ডাকঘরের নাম সংক্ষিপ্ত করে সংযোজন করা হলেও সমস্যা অনেকটা কমে আসবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বলেন, সমস্যা সমাধানে ঠিকানা লেখার ক্যারেক্টারের সংখ্যা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ছাড়া আরও দুটি বিষয় সংযোজন-বিয়োজনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এসব সিদ্ধান্ত হলে তখন ঠিকানা লেখার ক্যারেক্টারের সংখ্যা দ্বিগুণের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ