জন্মদিনে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই, জন্মদিন মানেই মৃত্যুর দিকে আরও একটি বছর এগিয়ে যাওয়া। জন্মদিন নিয়ে এমন ভাবনার ব্যাক্তিটির ৭৫তম জন্মদিন আজ। তবে তিনি এখন আর আমাদের মাঝে নেই, সেই মৃত্যুর দিকেই ধাবিত হয়েছেন। তিনি হলেন আমাদের কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। যার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়।
ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার অন্য দুই ভাইও বরেণ্য ও প্রতিভাবান।
কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। দীর্ঘকাল ধরে লেখার জাদুতে পাঠককে মোহিত করে রেখেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র সব শাখাতেই অসম্ভব সফল এই নন্দিত লেখক। তিনি তার লেখায় প্রতি প্যারায় প্যারায় পাঠককে চমকে দিতেন। অনেক লেখক দেখা যায় দু–চার পাতা পর একটা চমক দেন।
অনেক লেখক একটা অধ্যায়ের শেষে চমক রাখেন, যাতে পাঠক পরের অধ্যায় পড়তে আগ্রহ বোধ করেন। আর হুমায়ূন আহমেদ পাঠককে চমকে দেন ক্ষণে ক্ষণে। দু–চার-দশ লাইন পরপরই চমক থাকে তার। আর পাঠক চমকাতে চমকাতে একটা বিস্ময়কর ঘোরের মধ্যে চলে যান। আসলেই তিনি কথার জাদুকর ছিলেন। লেখার জাদুতে তিনি যেমন আলোড়ন তুলেছেন, তেমনি সৃজনশীলতার সব শাখাতেই পাঠক ও দর্শকদের নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন।
চলচ্চিত্র বা নাটকের জন্য তিনি গান লিখেছেন, আবার তাতে সুরও দিয়েছেন- যা আজও জনপ্রিয়। ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো ’, ‘চাঁদনী পসরে কে’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ’এক যে ছিল সোনার কন্যা’, ‘আমার ভাঙ্গা ঘরে ভাঙ্গা বেড়া ভাঙ্গা চালার ফাঁকে’, ‘চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’ এসব গান আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি আমাদের ছেড়ে যান। মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর সেখানেই তিনি মারা যান। মাত্র ৬৪ বছর বয়সেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রু পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।