দক্ষিণ ইউক্রেনে অবস্থিত সোভিয়েত যুগের একটি বাঁধ গত মঙ্গলবার উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। এমনটাই অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। বাঁধটি রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে অবস্থিত। এতে করে যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলজুড়ে পানি ছড়িয়ে পড়েছে।
বাঁধ ধ্বংস হওয়ার পরে সেখান থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, নোভা কাখোভকায় বাঁধ ধ্বংসের পর ৮০টি শহর ও গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। এর জন্য তিনি রাশিয়াকে দায়ী করেছেন। ডিনিপ্রো নদীতে পানি বাড়ছ এবং খেরসন শহরের জন্য একটি বিপর্যয়কর বন্যার ঝুঁকি তৈরি করেছে।একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বন্যার পানির স্রোত বাঁধের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি শহর ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে এবং পানি আরো নীচু এলাকার দিকে যাচ্ছে। ফলে ওই এলাকার মানুষ বাস ও ট্রেনে করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া দরকার বলে ডেপুটি প্রসিকিউটরজেনারেল ভিক্টোরিয়া লিটভিনোভা ইউক্রেনীয় টেলিভিশনে বলেছেন।
ডিনিপ্রো নদীর পশ্চিমে ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে রয়েছে ১৭ হাজার মানুষ এবং রাশিয়ান নিয়ন্ত্রিত পূর্বে রয়েছে ২৫ হাজার মানুষ।
এছাড়াও ইউক্রেনের টেলিভিশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেনকো বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ২৪টি বসতি প্লাবিত হয়েছে। তিনি রাশিয়াকে খেরসনের দক্ষিণ অঞ্চলে গোলাবর্ষণের জন্য অভিযুক্ত করেছেন, যেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান পানির স্তর বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট বিপদ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছেন।
এদিকে রাশিয়া বাঁধটি ধ্বংস করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।বরং ইউক্রেনের তারা এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছে। উভয় দেশের দাবি বিবিসি এখনো যাচাই করে দেখেনি। কাখোভকা বাঁধ এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কৃষক এবং স্থানীয়দের পাশাপাশি জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি সরবরাহ করে। এটি রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়ার দক্ষিণে পনি বহনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলও।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রশাসক ইউক্রহাইড্রোনের্গো সতর্ক করে দিয়েছিলেন, বুধবার সকালে খালি হওয়া জলাধার থেকে পানি আরো নিচের দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে পানি দ্রুত হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে । ইউরোপের বৃহত্তম এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র শীতল রাখার জন্য এই জলাধারের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) অনুসারে, সেখানে পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং প্ল্যান্টের জন্য ‘তাত্ক্ষণিক পারমাণবিক নিরাপত্তা ঝুঁকি’ নেই বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার ভোরে বাঁধটি কী কারণে ভেঙেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে এটি উড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছে। কারণ মস্কো আশঙ্কা করেছিল, ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের পাল্টা আক্রমণের অংশ হিসাবে রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে অগ্রসর হওয়ার এই বাঁধ ব্যবহার করবে। রাশিয়ার জন্য দক্ষিণ ইউক্রেনের দখলকৃত এই অঞ্চল রক্ষার জন্য বেশ চাপ রয়েছে। বাঁধটি সেজন্য একটি সমস্যার কারণ হতে পারে।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, বাঁধ ধ্বংস করে ইউক্রেনকে থামাতে পারবে না রাশিয়া। আমরা এখনও আমাদের সমস্ত জমি মুক্ত করতে প্রস্তুত।