তুরস্কের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুধুই হাহাকার! একবার নয়, সোমবার ভোর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে তুরস্ক। ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়েছে বহু মানুষ। ৫ দশমিক ৪ মাত্রার শেষ ভূমিকম্পটি অনুভূত হয় পূর্ব তুরস্কে। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে।
বারবার কেঁপে অঠায় দেশটির একাধিক এলাকায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে বাড়িঘর, দোকান। রাস্তাঘাটে ধ্বংসস্তূপের পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মরদেহ। কেউ কেউ আবার রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন। মাথার ছাদটুকু মাটিতে মিশে গেছে। সেদিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন, এমন মানুষের সংখ্যাও তুরস্কে কম নয়।
তুরস্ক যেন প্রকৃতির রোষের মুখে পড়েছে। একে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা নেই, অন্যদিকে বৃষ্টি। ছাদহীন মানুষরা ছোটাছুটি করছেন বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে। কিন্তু কোথায় আশ্রয় নেবেন, ছাদ তো নেই কোথাও। সর্বহারা পরিবারগুলো সেই বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে চলেছেন মাইলের পর মাইল পথ। রাতটুকু কাটানোর জন্য খুঁজছেন একটি আশ্রয়। কেউ পাচ্ছেন, কেউবা আবার খোলা আকাশকেই নিজের ঠিকানা বানিয়ে নিয়েছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর সানলিফুরা। যে শহরে দুইদিন আগেও আলো ঝলমল করত, ইট কাঠের শহরের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল, সেই শহর আজ ধূলিসাৎ। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে শহরের মানুষের স্বপ্ন।সেখানকার মানুষদের গলায় এখন শুধুই যন্ত্রণা। শুধু তুরস্ক নয়, এই ভূমিকম্প প্রতিবেশি দেশ সিরিয়াতেও প্রভাব ফেলেছে। সিরিয়ার ২০ বছর বয়সী এক ছাত্র বলেন, ‘সোমবার দুপুর পর্যন্তও আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। কিন্তু দুপুরের পর থেকে সেই ফোনে কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।’ সিরিয়ার ওই ছাত্র এখনও বিশ্বাস করছেন না যে তার বন্ধু মারা গেছেন, তিনি ভাবছেন, হয়তো ফোনের চার্জ ফুরিয়ে গেছে।
তুরস্কের রাস্তায় রাস্তায় যেন এখনও কোথাও কোথাও প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। ওমর নামে এক বাসিন্দা তার কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করে চলেছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলেছে। সম্বল একটা সোফার ধ্বংসাবশেষ, ভাঙা পায়ের চেয়ার, ছেঁড়া পর্দা। সেগুলোকেই যত্ন করে সাজিয়ে বসবাসের উপযোগী করে তুলতে উদ্যোগী ওমররা।বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেখানেই তারা রাত কাটাবেন বলে স্থির করেন। রাতে ঠান্ডার দমকা হাওয়া হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে, তবুও নড়ছেন না তাঁরা। বিশ্বাস, ওই ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বেঁচে আছে প্রাণ। কেউ কেউ আবার নিজের রুটিরুজির দোকানটি আঁকড়ে বসে রয়েছেন। তাদের কথায়, ‘আমরা কোথাও যাব না, এটাই আমাদের শেষ সম্বল।’
ওমরদের ফেলে কিছুটা পথ এগোলে চোখে পড়ে এক পরিবারের দিকে। সাদা গাড়ির মধ্যে পাঁচ ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসে রয়েছেন এক ভদ্রলোক। করুণ মুখে গাড়ির মধ্যে দিয়ে শহরের ধ্বংস রূপ দেখছে বাচ্চাগুলো।