দুটি ভারতীয় সরকারি ও দুটি প্রতিরক্ষা শিল্প সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইউক্রেনের ব্যবহৃত গোলাবারুদের খুব কম পরিমাণ উৎপাদন করে ভারত। একজন কর্মকর্তা ধারণা দিয়েছেন যে যুদ্ধ শুরুর পর কিয়েভ যে অস্ত্র আমদানি করেছে সেটার এক ভাগের কম হতে পারে। ইউরোপীয় গ্রাহকরা কিয়েভের কাছে এসব গোলা পুনরায় বিক্রি করেছে নাকি অনুদান হিসেবে দিয়েছে, না নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স।
ইউক্রেনে ভারতীয় যুদ্ধাস্ত্র পাঠানো ইউরোপীয় দেশের মধ্যে রয়েছে ইতালি ও চেক প্রজাতন্ত্র। এই দুই দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে কিয়েভকে আর্টিলারি শেল সরবরাহ করার উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে। একজন স্প্যানিশ ও একজন সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তার পাশাপাশি যন্ত্র ইন্ডিয়ার একজন সাবেক শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা এমন তথ্য দিয়েছেন। যন্ত্র ইন্ডিয়া একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি। এদের যুদ্ধাস্ত্র ইউক্রেন ব্যবহার করছে।
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের কাছে আর্টিলারি গোলা বিক্রি করছেন ভারতীয় অস্ত্র নির্মাতারা। তবে এসব গোলা নিজেরা ব্যবহার না করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউক্রেনে পাঠিয়ে দিচ্ছে ইউরোপীয়রা। এ নিয়ে মস্কো আপত্তি জানালেও গোলা রপ্তানি বন্ধ করতে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি নয়াদিল্লি। এতে দীর্ঘদিনের পুরোনো বন্ধু রাশিয়ার চক্ষুশূলে পরিণত হতে পারে ভারত।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ১১ জন ভারতীয় ও ইউরোপীয় সরকারি-প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এবং কাস্টমসের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ নিয়ে রয়টার্সই প্রথমবারের মতো প্রতিবেদন প্রকাশ করলো।
সূত্র ও কাস্টমসের তথ্য বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদারে এক বছরের বেশি সময় ধরে ভারতীয় অস্ত্রের হস্তান্তর হয়ে আসছে। যদিও ভারতীয় অস্ত্র রপ্তানি আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে একমাত্র ঘোষিত ক্রেতাই কেনা অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। এর ব্যত্যয় করলে ভবিষ্যতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দিতে পারে ভারত সরকার।
চীনকে দমনে সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করেছে দিল্লি। তবে রাশিয়ার সঙ্গেও ভারতের উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বেশ কয়েক দশক ধরে তাদের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হলো রাশিয়া। মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা আরোপে যোগ দেননি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
একজন ভারতীয় কর্মকর্তা জানান, গত জুলাই মাসে কাজাখস্তানে এস. জয়শঙ্কর ও লাভরভের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে ভারতীয় অস্ত্র যে ইউক্রেনীয়রা ব্যবহার করছেন সেবিষয়টি জানান লাভরভ। বলেন, এসব অস্ত্রের কিছু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভারতীয় কোম্পানি তৈরি করছে। তবে এর জবাবে জয়শঙ্কর কী বলেছেন তা জানাননি ওই কর্মকর্তা।
ভারতের অস্ত্র আমদানি ৬০ শতাংশ জোগান দেয় রাশিয়া। তাই ভারতের কাছে বরাবরই রাশিয়া একটি মূল্যবান অংশীদার। গত জুলাই মাসে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর মোদি তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক সফরের জন্য মস্কোকে বেছে নেন।
ইউক্রেনে গোলা স্থানান্তরের বিষয়ে সরাসারি অবগত এমন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছেন, দিল্লি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে ইউরোপে সরবরাহ বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রয়টার্সের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এমন ২০ জনের বেশিরভাগের মতো তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে গত জুলাইয়ের বৈঠকের সময়সহ ক্রেমলিন অন্তত দুটি অনুষ্ঠানে বিষয়টি উত্থাপন করেছে। এমনটাই জানিয়েছেন তিনজন ভারতীয় কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে রাশিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি। ইউক্রেনীয়, ইতালীয়, স্প্যানিশ ও চেকের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে গত জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ইউক্রেনে আর্টিলারি গোলা পাঠায়নি বা বিক্রি করেনি ভারত।