নতুন বছরের শুরুতেই ইউক্রেনের ওপর মরিয়া হয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। গত বছরের শেষ দিকেও বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে রুশবাহিনী। এই শীতের মধ্যে ইউক্রেনবাসীর বিদ্যুতের চাহিদা যখন বেড়েছে তখন একাধারে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অনেক বিদ্যুত্ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে অনেক এলাকা পুরোপুরি বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়েছে। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও দাবি করেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এদিকে একটি রুশ সেনা ঘাঁটিতে হামলার দাবি করেছে ইউক্রেনবাহিনী। এতে ৪০০-এর মতো রুশ সেনা নিহতেরও দাবি করেছে তারা। যদিও এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। সাবেক ন্যাটো জেনারেল দাবি করেছেন, বছরের মাঝামাঝি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির ঘটনা ঘটতে পারে।
নতুন বছরে পা দিতেই ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য মিরর’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন বছর পা দিতেই ইউক্রেনের উপর মরিয়া হয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে পুতিনবাহিনী। কিয়েভের পুলিশ প্রধান আন্দ্রি নেবিটোভ টেলিগ্রামে একটি ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে কিয়েভে আঘাত হানা কামিকাজে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের উপর রুশ ভাষায় ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার বা শুভ নববর্ষ’ লেখা রয়েছে। নেবিটোভ বলেন, ‘একটি খেলার মাঠে এই ড্রোন হামলা চালানো হয়। এই মাঠে শিশুরা খেলা করে।’ সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে উড়ে আসা ঐ ড্রোন কিয়েভের মাটি স্পর্শ করতেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। রুশ সেনাদের এই কর্মকাণ্ডকে ‘অসুস্থ’ মানসিকতার পরিচয় বলেও দাবি করেছেন কিয়েভের সাধারণ মানুষ। ইউক্রেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ব্রিজেট ব্রিঙ্ক বলেন, নতুন বছরের প্রথমে কিয়েভের উপর এই ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা প্রমাণ করে রাশিয়া ‘কাপুরুষ।’ তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘পুতিন এখনো বুঝতে পারছেন না যে ইউক্রেনীয়রা লোহার তৈরি।’
রবিবার রাতেও কিয়েভে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। শহরটিতে ঘন ঘন বেজে উঠে এয়ার রেড সাইরেন। কিয়েভের গভর্নর ওলেক্সি কুলেবা জানান, মধ্যরাতের কিছু আগে হওয়া হামলায় বিদ্যুেকন্দ্র, পানিবণ্টন প্রণালির মতো জরুরি অবকাঠামোকে নিশানা করেছে রুশবাহিনী। তিনি আরো জানান, ইরানের তৈরি ‘শাহেদ’ ড্রোন ব্যবহার করছে রাশিয়ার সেনা। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিত্শ্চকো জানিয়েছেন, শহরের উত্তর-পূর্বে বিস্ফোরণ হয়েছে। ভেঙে পড়া রুশ ড্রোনের আঘাতে এক ব্যক্তি আহত হয়েছে। মেয়র বলেছেন, রুশ ড্রোন আক্রমণে বিভিন্ন জ্বালানি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর ফলে বিদ্যুত্ বিভ্রাট ঘটেছে। অনেক এলাকা বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী দাবি করছে, তারা ইরানে-তৈরি ৩৯টি শাহেদ ড্রোনের সবগুলোকেই গুলি করে ভূপাতিত করেছে। গত কিছু দিনে রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানীর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইরানের তৈরি ড্রোন দিয়ে অনেকগুলো আক্রমণ চালিয়েছে। গত বছরের শেষ দিনেও কিয়েভের বিভিন্ন স্থাপনার ওপর লক্ষ্য করে হামলা চালায় প্রেসিডেন্ট পুতিনের বাহিনী। একইভাবে গত শুক্রবারও হামলা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, এই যুদ্ধে রাশিয়ার অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে শীত। এখন কিয়েভে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে। ফলে ঘর গরম রাখতে ও পানির পাইপগুলোকে সচল রাখতে বিদ্যুতের প্রয়োজন। সেই দুর্বল জায়গাতেই আঘাত করছে রাশিয়া। এভাবে জনতার মনোবল ভাঙতে চাইছে পুতিনবাহিনী। শুধু তাই নয়, ঠান্ডায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার একটি পরিকল্পনাও করছে রুশ সেনা। নতুন করে সামরিক অভিযান নিয়ে ইউক্রেনকে সতর্ক করে অনেকেই বলছেন, ঠান্ডার জেরেই নেপোলিয়নকে রাশিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে হারতে হয়েছিল। একইভাবে ‘জেনারেল উইন্টার’-এর দাপটে বিপর্যস্ত হয়েছিল নািসবাহিনী। তাই শীতের মৌসুমে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
রুশ সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কয়েকশ নিহতের দাবি
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দাবি করছে তারা পূর্বাঞ্চলীয় দোনেেস্ক এক রকেট আক্রমণ চালিয়ে কয়েকশ রুশ সৈন্যকে হত্যা করেছে। বিবিসির সংবাদদাতারা জানান, নিহত রুশ সৈন্যের সংখ্যা প্রায় ৪০০ হতে পারে। এ সংখ্যা নিশ্চিতভাবে যাচাই করা যায়নি। দোনেেস্কর রুশ-সমর্থক কর্তৃপক্ষ হতাহতের কথা স্বীকার করেছে, তবে খবরে প্রকাশিত সংখ্যাগুলো নিশ্চিত করেনি। রুশ অধিকৃত মাকিইভকা শহরে একটি স্কুল ভবনে যা রুশ সৈন্যরা একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল সেখানে ইউক্রেনীয় রকেটটি আঘাত হানে। একজন রুশ কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার হিমার্স রকেট দিয়ে আক্রমণটি চালানো হয় এবং এটি ছিল এক বড় আঘাত। দোনেেস্কর একজন রুশ-সমর্থক কর্মকর্তা দানিল বেজসোনভ বলেছেন, নতুন বছর শুরুর দিনে মধ্যরাতের দুই মিনিট পরই ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে। টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি বলেন, আক্রমণে হতাহতের সংখ্যা এখনো গণনা করা হচ্ছে। কিছু রুশ ভাষ্যকার এবং ব্লগার আক্রমণের কথা স্বীকার করেছেন, তবে তারা আভাস দেন যে নিহতের সংখ্যা যত দাবি করা হচ্ছে তার চেয়ে কম। রুশ অনুষ্ঠান উপস্থাপক ভ্লাদিমির সলোভিয়ভ টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেন, অনেক প্রাণহানি হয়েছে। তবে তা ৪০০-এর ধারেকাছেও নয়। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের আক্রমণে ৪০০ নিহত ছাড়াও আরো ৩০০ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির পূর্বাভাস সাবেক ন্যাটো জেনারেলের
২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির আশা দেখছেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সাবেক জেনারেল। জার্মানি সাবেক সেনা ও ন্যাটোর শীর্ষ কর্মকর্তা হ্যান্স-লোথার ডোমরোজ সাক্ষাত্কারে বলেন, আমার মনে হয় এই গ্রীষ্মে উভয়পক্ষ বলবে, এটি আর হচ্ছে না। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের দিকে উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধের গতি অচলাবস্থায় পৌঁছাতে পারে। তখনই যুদ্ধবিরতির আলোচনার মুহূর্ত হবে বলে মনে করেন তিনি।