শিরোনাম:
হঠাৎ বুকে ব্যথা নিয়ে চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন সংগীত শিল্পী এ আর রহমান ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ বোমা হামলায় ২৪ জনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর তান্ডবে ৩৪ জনের মৃত্যু রাতারাতি হারিয়ে গেল জাম্বিয়ার কাফুয়ে নদী ঢাকা ছেড়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব সহায়তা চেয়ে এনবিআরকে বিজিবিএর ৫ প্রস্তাব বিশ্বজুড়ে ইসলাম বিদ্বেষ উচ্চহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিয়ে চিন্তিত জাতিসংঘের মহাসচিব ৪৩ দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প দুবাইয়ে সড়ক যানজট নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে জামালপুরে দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগে শিক্ষক আটক
রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন

দোটানায় চীন-মার্কিন সম্পর্ক!

প্রতিনিধির / ২২৩ বার
আপডেট : সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
দোটানায় চীন-মার্কিন সম্পর্ক!
দোটানায় চীন-মার্কিন সম্পর্ক!

বেইজিং যদি ইউক্রেন যুদ্ধকে পশ্চিমের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট মনে করে, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভক্তি আরও বাড়বে। এটি চলতে পারে আরও কয়েক দশক পর্যন্ত। কারণ ইউক্রেন ভিয়েতনাম বা তাইওয়ান নয়। সেখানে যে কোনো হস্তক্ষেপের ব্যাপক বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া হবে।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বর্ষপূর্তিতে বেইজিং মস্কোকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দিয়েছে। বর্ষপূর্তির দুই দিন আগে ২২ ফেব্রুয়ারি চীনের স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই মস্কো সফরে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা মিলিয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। বেলুন নিয়ে কিছু দিন আগেই এই সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হতে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটা না হলেও ইউক্রেন এই সম্পর্ক কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটা বলা যাচ্ছে না।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি জানান, রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার ফল ভালো হবে না। মার্কিন হুমকি উপেক্ষা করেই বেইজিং এখন মস্কোর দিকে ঝুঁকছে। ওয়াং ই গত সপ্তাহে মস্কো সফরের আগে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেন।ওই সম্মেলনে তিনি চীনের বেলুনের মার্কিন আকাশসীমা লঙ্ঘনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন। তিনি বরং এক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়াকে ‘দুর্বল’ ও ‘ক্ষ্যাপাটে’ বলে মন্তব্য করেন। বেলুন বিতর্ক শুরুর পর থেকে চীনের গণমাধ্যমে মার্কিন বিরোধী প্রচারণা কিছুটা বাড়ে।

একই সঙ্গে রাশিয়ার ইউক্রেনে যুদ্ধের পক্ষে প্রচার শুরু হয়। দেখানো হয়, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়া নয় বরং ন্যাটোর আগ্রাসী কর্মকাণ্ডই দায়ী। বেলুন নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি নিরসনে পরদার আড়ালে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চললেও ওপর দিয়ে বেইজিং সেটা বুঝতে দেয়নি।কর্মকর্তারা বরং অভ্যাসবশত মার্কিন বিরোধী ধোঁয়া তোলেন। ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির দুই দিন আগে ওয়াং ই এই মস্কোতে পুতিনকে জানান, চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক তাজ পর্বতের মতো মজবুত। তৃতীয় কোনো পক্ষ এতে চিড় ধরাতে পারবেন না।

উল্লেখ্য, তাজ পর্বতের মতো মজবুত কথাটি চীনে প্রচলিত একটি প্রবাদ যার অর্থ খুব দৃঢ়। এই যুদ্ধে চীন যে রাশিয়ার পাশে আছে সেটা কোনো রাখঢাক না রেখেই তিনি জানিয়ে দেন।ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিনিয়র কর্মকর্তা জোসেফ বোরেল ব্যক্তিগত আলাপচারীতায় মন্তব্য করেছেন, তিনি মনে করেন না যে বেইজিং মস্কোকে যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করবে। এ ব্যাপারে ব্লিঙ্কেন ও জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি।

চীন এ যাবত মৌখিকভাবে রাশিয়ার পক্ষে ছিল, অর্থনৈতিকভাবেও পাশে ছিল, কিন্তু অস্ত্র পাঠায়নি। চীন সাধারণত উন্নয়নশীল বিশ্বে অর্থনৈতিক সহায়তার করলেও সামরিক ইস্যুতে কোনো দেশের সঙ্গে জড়ায়নি। রাশিয়ায় অস্ত্র পাঠালে বৈশ্বিক কূটনীতিতে যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে সেটি চীন অবগত আছে।ইউক্রেন যুদ্ধে এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাব ১৩২-৭ ভোটে পাস হয়েছে। বাংলাদেশসহ ৩২টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এই ভোটের তাৎপর্য কেবল এতটুকুই যে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ চায় ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বন্ধ হোক।

চীন অবশ্য এরই মধ্যে যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৪ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ১২ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। দেশটি এর আগেও যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছিল। তবে এবারের প্রস্তাবটি ছিল বিস্তারিত। এর মধ্য দিয়ে বেইজিং এ বিষয়টিই তুলে ধরল যে তারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের সদিচ্ছা রয়েছে।

চীনের প্রস্তাবে জানানো হয়েছে, একে অন্যের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, শীতল যুদ্ধকালীন মানসিকতা পরিহার করতে হবে, বৈরিতা বন্ধ, শান্তি আলোচনা শুরু করা, মানবিক সংকট সমাধান, সাধারণ নাগরিক ও যুদ্ধবন্দিদের অধিকার সুরক্ষা, পরমাণু স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৌশলগত ঝুঁকি এড়ানো, খাদ্যশস্য সরবরাহে বিঘ্ন না ঘটানো, একতরফা নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া এবং যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠন কাজে সহযোগিতা করা।শান্তি উদ্যোগের পাশাপাশি রাশিয়াকে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টিও চীনের বিকল্প বিবেচনায় আছে। কারণ ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর চীনের সামনে নিজেদের অস্ত্র পরীক্ষার সুযোগ আর আসেনি।

ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ইতোমধ্যেই যে নজির তৈরি করেছে সেটি চীনের সামরিকতা পাঠানোকে এক রকম বৈধতা দেবে, বেইজিং এমন দাবি করতেই পারে। বেলুন ঘটনার পর চীন-মার্কিন সম্পর্ক এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।তাই নতুন উত্তেজনা শান্তি প্রতিষ্ঠার সহায়ক হবে না। বিশেষ করে চীন যেখানে নিজেই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ