সরকারিভাবে আমদানি করা ৭১ হাজার ৮০১ মেট্রিক টন সার গুদামে না পৌঁছে দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটনের মালিকানাধীন মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ কাণ্ড করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আত্মসাৎ করা সারের ক্রয় মূল্য ৫৫৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর সঙ্গে ৫ শতাংশ হারে অন্যান্য খরচ যোগ করা হয়েছে।
ফলে টাকার হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৯ হাজার ৬৪ হাজার টাকা।
হাইকোর্টে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের -বিসিআইসির দেওয়া প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপিত প্রতিবেদনটি কালের কণ্ঠ পেয়েছে আজ বুধবার।বিসিআইসি গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির এই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সংস্থাটির আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব। দুর্নীতি দমন কমিশন -দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
তিনটি তদন্ত কমিটির পর্যালোচনা, সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বিসিআইসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেসার্স পোটন ট্রেডার্স কর্তৃক ৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাতের বিষয়টি সংস্থার (বিসিআইসি) ক্রয় ও বিপণন বিভাগ কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। বিসিআেইসির তথ্য অনুযায়ী সরবরাহ না করা মোট সারের পরিমাণ ৭১ হাজার ৮০১ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন।
উক্ত সারের ক্রয় মূল্য ৫৫৩ কোটি, ৮৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৫ টাকা। উক্ত মূল্যের সাথে অন্যান্য খরচ ৫ শতাংশ বা ২৭ কোটি ৬৯ লাখ ৪৩ হাজার ২৮৮ টাকা যোগ করা হলে বিসিআইসি তথা সরকারের মোট ক্ষতি দাড়ায় ৫৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা।দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আগামী ২৩ জুলাই আদালত স্বপ্রণোদিত এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ রেখেছেন। এ সময়ের মধ্যে দুদককে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘সার আত্মসাতের ঘটনা দুদকের তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি অনুসন্ধান করছে।অনুসন্ধানের বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়েই অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিল করা হবে।’‘৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ’ শিরোনামে গত ৫ জুন প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক। এ প্রতিবেদন নজরে আসলে ওই দিনই আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।
অন্তর্বর্তী আদেশে আদালত আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুদক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট -বিএফআইইউ ও বিসিআইসির চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।আর ৫৮২ কোটি টাকা মূল্যের ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
সে ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জুন বিষয়টি আদালতে উঠলে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করতে সময় চান বিসিআইসির আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব। সেদিন আদালত এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। এরপর মঙ্গলবার (১১ জুলাই) প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য রাখেন।