চুনারুঘাট উপজেলায় পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।এদিকে বাড়তি রোগী ও শয্যাসংখ্যা সীমিত হওয়ায় বেশির ভাগ রোগীকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে। গুরুতর রোগীরা ছুটছেন জেলা সদর হাসপাতালে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৫ ও ১৬ জুলাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ৭০ রোগী। সর্বশেষ তথ্যমতে সেখানে চিকিৎসাধীন ৫৫ জন। এর মধ্যে ১৩ জনই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়া ভর্তি রয়েছেন জ্বর, পেটব্যথাসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা। সময়ের সঙ্গে চাপ বাড়তে থাকায় অনেক রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের ভেতর জায়গা না থাকায় অনেক নারী রোগীকে পুরুষ ওয়ার্ডের ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।সম্প্রতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, নারী রোগীদের জন্য সেখানে ১৮ শয্যার একটিমাত্র ওয়ার্ড রয়েছে। সেখানে রোগী আছেন ২৩ জন। সিট না পেয়ে তাদের মধ্যে কয়েকজন ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে আছেন।
পীরেরগাঁও এলাকার এক রোগীর স্বজন পাভেল মিয়া জানান, শনিবার তাঁর মা পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি কোনো শয্যা পাননি। বাধ্য হয়েই তাঁকে হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান, হাসপাতালের সবাই সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন রোগীদের সেবা দিতে। তবে ছাড়পত্র পাওয়ার পরও মারামারির ঘটনায় জড়িত কিছু রোগী আহতের সনদের জন্য জোর করে সিট দখলে রেখেছেন। তাদের জন্য প্রকৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত রোগী আয়তন এলাকার খায়রুন্নাহার ও জারুলিয়া এলাকার সাহেদা খাতুন জানান, মারামারির আঘাত নেই এমন বেশ কয়েকজন রোগীকে চিকিৎসক ছাড়পত্র দিলেও তারা যেতে আগ্রহী নন। এসব রোগীর দাবি, হাসপাতালে তারা কয়েক দিন থাকলে জখমি সনদ ভারী হবে, যা মামলায় কাজে দেবে। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের একজন সেবিকাও।
গাজীপুর বাসুল্লা এলাকার ডায়রিয়া আক্রান্ত আরেক রোগীর অভিভাবক মনির মিয়া জানান, দু’দিন ধরে রোগী নিয়ে হাসপাতালে আছেন, তবে শয্যা পাচ্ছেন না। হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যান নেই। তাই গরমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক দোলন জানান, সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্তের পাশাপাশি জ্বর ও পেটব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের কারও অতিরিক্ত সমস্যা হলে হবিগঞ্জে পাঠানো হচ্ছে।
হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন হাসান জানান, ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী এসেছেন। তাদের মধ্যে অর্ধেকই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রোববার সকালে নতুন আরও দু’জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। নদনদী, খাল-বিলের দূষিত পানি ব্যবহারের আগে ঠিকমতো শোধন না করায় হয়তো ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে খোলা পানি ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। জনবল সংকটের কারণে কর্তব্যরতদের বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে। তবে রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং স্যালাইনের যথেষ্ট মজুত আছে বলে জানান তিনি।